ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। প্রত্যাশার পাহাড় নিয়ে দায়িত্ব নেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু সেই প্রত্যাশা সরকারের ১ বছরে কতটা পূরণ হয়েছে— বছর শেষে আছে এমন প্রশ্নও।
শিক্ষাবিদ, গবেষক ও আইনজ্ঞরা বলছেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও মব সন্ত্রাস ঠেকাতে সরকার অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে। বিভাজনও বেড়েছে সমাজে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন বিচার ও সংস্কারের গতি নিয়েও।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, মব সন্ত্রাসের সঙ্গে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার ওপর যে দৃশ্যমান অত্যাচার, সেসবের বিপরীতে সরকারের জোরালো অবস্থান দেখা যায়নি। এমনি সরকারের ভেতরের অনেকেই এই কর্মকাণ্ডগুলোকে যৌক্তিকতা দেয়ার চেষ্টাই করেছে।
তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিকভাবে যে সমস্ত তৎপরতা আগে চালু ছিল, সেসব এখনও চলমান। বড় ব্যাবসীয়ারাও অনেকটা একই পন্থায় টিকে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি ঋণখেলাপির পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিকের মতে, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজের ধরণ গতানুগতিকই রয়েছে। গত দেড় দশক পুলিশও আইন অনুযায়ী চলেনি, এখনও তাই। জামিন বাণিজ্যও আগের মতো চলমান।
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ইস্যুতে তিনি বলেন, বেকারত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এসব বিষয় যেন আলোচনার বাইরে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, অনেকটা একই বলয়ে সার্বিক ইস্যুগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রশ্ন তোলার সঙ্গে এর অভ্যন্তরীণ ইস্যুও একপেশে ধরণের। একদল মানুষ যখন সংক্ষুব্দ হচ্ছেন, তারপর নিজেরাই অভিযোগকারী হয়ে যাচ্ছে। এখানেই শেষ না, তারা নিজেরা তদন্তের কাজও করছেন। আবার বিচারিক প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করছেন নিজেরাই।
তবে মেয়াদ ও কার্যক্রম বিবেচনা করলে এসব ক্ষেত্রে ব্যর্থতা স্বীকার করতে নারাজ সরকারের নীতি নির্ধারকরা। বলছেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুন:প্রতিষ্ঠা, গণতান্ত্রিক সংস্কার ও জুলাই সনদসহ ১২ ক্ষেত্রে অর্জন রয়েছে সরকারের।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই সময়ে মূল্যস্ফীতি ১৪ থেকে কমে ৮. ৪৮ শতাংশে নেমেছে। প্রবাসী আয় হয়েছে রেকর্ড ৩০.৩৩ ডলার। রফতানি বেড়েছে ৯ ভাগ।
তিনি আরও বলেন, গণঅভুত্থান পরবর্তী সরকারকে সফলতা-ব্যর্থতার সাধারণ ব্যারোমিটার দিয়ে মাপার সুযোগ নেই। নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি গড়তে চেষ্টার কোন কমতি নেই সরকারের।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্ট ঘোষণা দেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে। যদি সেই সময় অনু্যায়ী নির্বাচন হয়, তবে আগামী কয়েক মাসে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে এই সরকারের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশাও অনেক।