কয়রা উপজেলায় পাউবোর ২৭টি স্লুইসগেট আছে। এর মধ্যে ৫টি নষ্ট হয়ে গেছে। আর ১৫টি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। কৃষকেরা এগুলো সংস্কারের দাবি জানিয়েছে।
খুলনার সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা উপজেলার কয়েকটি স্লুইসগেট (জলকপাট) এখন আর কাজে আসছে না। আর কিছু স্লুইসগেট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে স্লুইসগেটগুলোর কপাট একেবারেই ওঠানো-নামানো যায় না। ফলে লোনাপানি থেকে ফসল রক্ষা, মিঠাপানি ধরে রাখা ও খালগুলোয় পানির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) সূত্রে জানা যায়, কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া ও কয়রা নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে। বাঁধের ভেতরের এলাকা ও আবাদি জমিতে বর্ষায় জমে থাকা অতিরিক্ত পানি অপসারণ ও লোনাপানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য নদীর তীরবর্তী স্থানে ছোট-বড় মিলিয়ে ২৭টি স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। ষাটের দশকে স্লুইসগেটগুলো নির্মিত হলেও এগুলো আর মেরামত করা হয়নি। এ কারণে ৫টি স্লুইসগেট একেবারেই অকেজো রয়েছে এবং ১৫টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সচল স্লুইসগেটের খালে একাধিক বাঁধ দিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা মাছ চাষ করছেন। এতে খালের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তালিকা অনুযায়ী, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় হাজতখালী, ওড়াতলা, নাকশা, ঘোপেরখাল ও পবনা এলাকার স্লুইসগেট একেবারেই অকেজো হয়ে গেছে।এ ছাড়া মসজিদ কুড়, আমাদী, গিলাবাড়ি, খোড়লকাঠি, শালুকখালী, হোগলা, শেওড়া, বাগালী, নারায়ণপুর, গোবিন্দপুর, সুতিয়া বাজার, দুই নম্বর কয়রা, গড়িয়াবাড়ী, আংটিহারা ও পদ্মপুকুর এলাকার স্লুইসগেট জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।
সম্প্রতি কয়রা সদর ইউনিয়নের গোবরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওড়াতোলা খাল ও কপোতাক্ষ নদের মুখের স্লুইসগেটটি একেবারেই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন জানালেন, গত পাঁচ বছরে এটি বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।
কয়রার উত্তর বেদকাশীর হাজতখালী এলাকায় গিয়ে স্লুইসগেটের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। উপজেলার নয়ানী ও শাকবাড়িয়া খালের স্লুইসগেট সচল রয়েছে। তবে খালে অন্তত ১৫টি বাঁধ দিয়ে স্থানীয় লোকজন মাছ চাষ করছেন। এতে খালের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলার ৬ নম্বর কয়রা গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমন আবাদের মৌসুম শুরু হয়েছে। এবার বৃষ্টি কম। পাশের গড়িয়াবাড়ী এলাকার স্লুইসগেটের জরাজীর্ণ কপাটের কারণে খালে বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। আমরা স্লুইসগেট সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।’
কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ বলেন, কয়রার অনেক স্লুইসগেট বিকল হয়ে গেছে। আবার অনেক খালে মিষ্টি পানিও সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। স্লুইসগেটগুলো জরুরি সংস্কার বা মেরামত করা প্রয়োজন।
পাউবো খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ‘যে স্লুইসগেট সংস্কার করলে সচল হবে, সেগুলো আমরা পর্যায়ক্রমে সংস্কার করে দেব। আর যেসব স্লুইসগেট একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে, সেগুলো আর সংস্কার করা সম্ভব নয়। আমরা প্রকল্প আকারে মন্ত্রণালয়ে ওই সব স্থানে নতুন করে স্লুইসগেট নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছি। অনুমোদন পেলে নতুন করে স্লুইসগেটগুলো নির্মাণ করা হবে।’