বক্সার হয়ে ব্যর্থ, গৃহকর্মী হয়ে স্বস্তি পেলেন সিডনি

0
22
‘দ্য হাউসমেইড’ সিনেমার প্রিমিয়ারে সিডনি সুইনি। এএফপি

অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয়, বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করে সমালোচিত—সব মিলিয়ে সিডনি সুইনিকে নিয়ে বিতর্কের অভাব নেই। তবে এইচবিওর সিরিজ ‘ইউফোরিয়া’ দিয়ে খ্যাতি পাওয়া ২৮ বছর বয়সী অভিনেত্রীর বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ২০২৫ সালে অম্লমধুর অভিজ্ঞতা হয়েছে সিডনির। এক সিনেমা ডাহা ফ্লপ করলেও আরেকটি স্বস্তি ফিরিয়েছে।

এমন সময় গেছে যখন সপ্তাহে ৫ থেকে ১০টি অডিশন দিতাম, একটা থেকেও ডাক পেতাম না। তবে আপনার যদি বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি থাকে, ব্যর্থতায় ভয় পাবেন না। তাই আমি হাল না ছেড়ে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি।

সিডনি সুইনি

আশায় গুড়ে বালি
২০২৪ সালের মার্চে পরিচালক ডেভিড মিচোড বক্সিং কিংবদন্তি ক্রিস্টি মার্টিন চরিত্রের জন্য অভিনেত্রী খুঁজছিলেন। চরিত্রটি ছিল কঠিন—রিংয়ে লড়াই করতে হবে এবং স্বামী ট্রেইনার জেমস মার্টিনের হাতে অত্যাচার সহ্য করতে হবে। এই চরিত্রের জন্য তালিকায় সিডনি ছিলেন না।

মিচোড বলেন, সিডনি সম্পর্কে মানুষের আগেই একটি ধারণা তৈরি হয়ে গেছে, তিনি আবেদনময়ী চরিত্রেই ভালো মানান। তবে ‘রিয়েলিটি’ দেখে অভিনেত্রী সিডনিকে আবিষ্কার করেন নির্মাতা। এরপর সিডনিকেই চরিত্রটির জন্য নির্বাচন করেন তিনি। সিডনি নিজের কৈশোরে মিক্স মার্শাল আর্ট শিখেছেন, এটাও চরিত্রটির জন্য তাঁকে উপযুক্ত করে তোলে।

কে এই সিডনি
প্রায় এক যুগের ক্যারিয়ার হলেও সিডনি সুইনি আলোচনায় এসেছেন বছর পাঁচেক হলো। এইচবিওর সিরিজ ‘ইউফোরিয়া’ তাঁর ক্যারিয়ারের গতিপথ বদলে দেয়। একই প্ল্যাটফর্মের আরেক সিরিজ ‘দ্য হোয়াইট লোটাস’ তাঁর পরিচিতি আরও বাড়িয়ে দেয়। তবে সিরিজে অভিনীত চরিত্র, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবি, বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে করা মন্তব্য নিয়ে বরাবরই সমালোচনা ও বিদ্রূপের শিকার হন ২৫ বছর বয়সী অভিনেত্রী।

সিডনি মনে করেন, ক্রিস্টি মার্টিনের রিং তাঁর মুক্তির জায়গা। ‘রিংয়ের ভেতরে আপনি যেন একটা বন্দী প্রাণী, কিন্তু সেটি তাঁর জন্য সবচেয়ে স্বাধীনতার জায়গা,’ বলেন সিডনি।

‘ক্রিস্টি’ সিনেমায় সিডনি সুইনি। আইএমডিবি
‘ক্রিস্টি’ সিনেমায় সিডনি সুইনি। আইএমডিবি

অভিনেত্রী ক্রিস্টি মার্টিন চরিত্রের জন্য ৩০ পাউন্ড ওজন বাড়িয়েছেন। এই সময়ে তাঁকে নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক নিয়ে না ভেবে বরং চরিত্রের প্রস্তুতিতে মন দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এমন চরিত্র বেছে নিই, যা সাধারণত দর্শকের কাছে প্রিয় নয় এবং আমি চাই দর্শক সেই চরিত্রের জন্য সহানুভূতি অনুভব করুক।’

সিডনির অভিনয় কখনো সহজ ছিল না। শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি ছাড়াও চরিত্রের আবেগ, ভয় ও শক্তি ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন।

সিডনি জানান, মানুষ প্রায়ই তাঁর চরিত্রকে তাঁর সঙ্গে মিশিয়ে ফেলতে চায়। কেউ তাঁকে ‘সেক্স সিম্বল’ আখ্যা দেয়, কেউবা তাঁর চরিত্রের বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা করে। কিন্তু তিনি নিজের দিক থেকে স্পষ্ট।

সিডনি সুইনি। রয়টার্স
সিডনি সুইনি। রয়টার্স

‘ক্রিস্টি’ নিয়ে বড় আশা ছিল সিডনির, কিন্তু পরে বক্স অফিসে ডাহা ফেল করে সিনেমাটি। সিডনির ক্যারিয়ার তো বটেই, চলতি বছরের অন্যতম ফ্লপ সিনেমা এটি।
১৫ মিলিয়ন ডলার বাজেটের সিনেমাটি গত ৭ নভেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর আয় করে মাত্র ২ মিলিয়ন। সমালোচকদের কাছেও খুব একটা পাত্তা পায়নি। সিনেমার ব্যর্থতার পর এক দীর্ঘ ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেন সিডনি।

সেখানে সিডনি লিখেছিলেন, ‘আমরা সব সময় বক্স অফিসের আয়ের জন্য শিল্প করি না, প্রভাবের জন্যও করি।’

গৃহকর্মী হয়ে ঘুরে দাঁড়ানো
‘ক্রিস্টি’ সিনেমার ব্যর্থতার আলোচনার মধ্যেই ১৯ ডিসেম্বর এসেছে সিডনি অভনীত নতুন সিনেমা ‘দ্য হাউসমেইড’। পল ফেগ পরিচালিত ইরোটিক সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারটিতে সিডনি ছাড়াও আছেন আমান্ডা সেফ্রিড। ছবিতে এমন এক গৃহকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিডনি তাঁর একটি ‘গোপন অতীত’ আছে।

৩৫ মিলিয়ন ডলারের বাজেটের ছবিটি বক্স অফিসে ভালো শুরু করেছে, এর মধ্যেই আয় করেছে প্রায় ২৭ মিলিয়ন ডলার।

শুরুতে অনেকের ধারণা ছিল যে কেবল গ্ল্যামারাস, আবেদনময় চরিত্রেই ভালো করতে পারেন সিডনি। তবে গত মে মাসে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘রিয়েলিটি’তে তাঁকে দেখা গেছে একেবারেই গ্ল্যামারহীন চরিত্রে, যা তাঁর খ্যাতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে খ্যাতি নিয়ে ভাবেন না সিডনি। নিজেকে এখনো বড় অভিনেত্রী মনে করেন না।

ছবিটি নিয়ে সিডনি বলেন, ‘এটা দারুণ এক অভিজ্ঞতা। এ সিনেমার প্রস্তাব পাওয়ার পর তর সইছিল না, শুটিংয়ের অভিজ্ঞতাও দারুণ। সব মিলিয়ে এটা ছিল উপভোগ্য এক যাত্রা।’ মুক্তির পর অনেক দর্শক এর সিকুয়েল চাইছেন। এ প্রসঙ্গে সিডনি বলেন, ‘এখনই আমাদের পরিকল্পনা নেই, তবে হতেও পারে।’

‘দ্য হাউসমেইড’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি
‘দ্য হাউসমেইড’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

কী বলছেন সমালোচকেরা
কেবল ব্যবসার বিচারেই নয়, সমালোচকেরাও সিনেমাটি এবং সিডনির পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছেন। রটেন টমাটোজ-এ ১৩৫ জন সমালোচকের রিভিউর মধ্যে ৭৫ শতাংশ ইতিবাচক। এক সমালোচক লিখেছেন, ‘এটা একটি ঝাঁজালো থ্রিলার; সিডনি আর আমান্ডার অভিনয় বেশ উপভোগ্য।’

‘দ্য হাউসমেইড’ সিনেমার প্রিমিয়ারে সিডনি সুইনি। এএফপি

মেটাক্রিটিকে ১০০–এর মধ্যে সিনেমাটির স্কোর ৬৭। এই ওয়েবসাইটের ৩২ সমালোচকের বেশির ভাগই ছবিটি সম্পর্কে ইতিবাচক রায় দিয়েছেন।

দ্য র‍্যাপ সিনেমাটি নিয়ে লিখেছে, ‘ছবির চমকগুলো আপনি হয়তো আগেই অনুমান করতে পারবেন, তবে সব মিলিয়ে এটি উপভোগ্য এক থ্রিলার। অনেক সময়ই ছবিটি আপনার প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে যাবে।’

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ লিখেছে, ‘এই সিনেমা আপনাকে নব্বই দশকের আলোচিত ইরোটিক থ্রিলারগুলোর কথা মনে করিয়ে দেবে।’

বিগ ফ্যাক্ট, ভ্যারাইটি ও পিপলডটকম অবলম্বনে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.