জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা এড়িয়ে চলতে বললেন ট্রাম্প

0
10
অক্টোবরে জাপান সফরে গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে সময় একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে, ছবি: রয়টার্স

চীন তাইওয়ান আক্রমণ করলে জাপান সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে, জাপানের পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির এমন বক্তব্যের পর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চীন।

বেইজিং জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। জবাবে জাপান বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে তাদের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক নীতি প্রতিফলিত হয়েছে।

জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী তাকাইচির ওই বক্তব্যের জেরে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় কূটনৈতিক বিরোধে জড়িয়েছে দুই প্রতিবেশী বেইজিং ও টোকিও।

তবে টোকিওর কয়েকজন কর্মকর্তা বেশ কয়েক দিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছিলেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে ট্রাম্প হয়তো তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দুর্বল করতেও প্রস্তুত হতে পারেন। এমন কিছু বেইজিংকে আরও সাহসী করে তুলতে পারে এবং পূর্ব এশিয়ায় সংঘাতের সূত্রপাত ঘটাতে পারে।

এই উত্তেজনার মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টেলিফোনে তাকাইচিকে চীনের সঙ্গে ভবিষ্যৎ উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়িয়ে চলতে বলেছেন।

এ বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন কয়েকটি সূত্র আরও বলেছে, গত মঙ্গলবার ট্রাম্প টেলিফোনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাকাইচির সঙ্গে কথা বলেছেন।

জাপান সরকারের দুটি সূত্র থেকেও বলা হয়েছে, ট্রাম্প টেলিফোনে তাকাইচির সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় ট্রাম্প বলেন, তিনি পরবর্তী সময় আরও কোনো উত্তেজনা দেখতে চান না।

বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় ওই দুই সূত্র নিজেদের নাম প্রকাশ করতে চাননি। তবে তাঁদের একজন বলেন, তাকাইচির কাছে বিশেষ কোনো দাবি রাখেননি ট্রাম্প। বেইজিং তাকাইচিকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে বলেছে। কিন্তু ট্রাম্প বেইজিংয়ের সুরে কথা বলেননি।

এখন পর্যন্ত জাপান বা প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি নিজের বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেননি। বরং দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, (প্রধানমন্ত্রীর) ওই বক্তব্য তাদের দীর্ঘদিনের নীতিকে প্রতিফলিত করেছে।

জাপানের মন্ত্রিপরিষদ সচিব মিনোরু কিহারা আজ বৃহস্পতিবার এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে টোকিওর কয়েকজন কর্মকর্তা কয়েক দিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছিলেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে ট্রাম্প হয়তো তাইওয়ানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দুর্বল করতেও প্রস্তুত হতে পারেন। এমন কিছু বেইজিংকে আরও সাহসী করে তুলতে পারে এবং পূর্ব এশিয়ায় সংঘাতের সূত্রপাত ঘটাতে পারে।

‘ট্রাম্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্কে জাপান সব সময়ই একটি অস্ত্র হিসেবে বা একটি কার্ড হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

কাজুহিরো মায়েজিমা, জাপানি অধ্যাপক

এ বিষয়ে জাপানের সোফিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তরাষ্ট্র নীতিবিষয়ক অধ্যাপক কাজুহিরো মায়েজিমা বলেন, ‘ট্রাম্পের জন্য যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে জাপান সব সময়ই একটি অস্ত্র হিসেবে বা একটি কার্ড হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।’

তাকাইচিকে ফোন করার ঠিক আগে ট্রাম্পের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের কথা হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া।

ওই ফোনালাপে সি তাইওয়ান বিষয়ে তাদের পররাষ্ট্রনীতি তুলে ধরেছেন। তাইওয়ানকে চীন এখনো নিজেদের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অংশ মনে করে, যা একদিন আবার এক হবে। তাইওয়ান নিয়ে এই দৃষ্টিভঙ্গি চীনের পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

অবশ্য তাইওয়ান চীনের এই দাবি মানে না এবং নিজেদের একটি স্বাধীন দেশ বলে ঘোষণা করেছে।

‘আমরা জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং আরও অনেক দেশের সঙ্গে চমৎকার সব বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। বিশ্ব শান্তিতে আছে, এটিকে শান্তিতে থাকতে দিন।’

তাইওয়ান বিষয়ে সির সঙ্গে ফোনালাপের খবর নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ট্রাম্প। বরং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে ‘অত্যন্ত শক্তিশালী’ সম্পর্ক উপভোগ করছে এবং একটি ব্যাপক বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে কাজ করছে।

ট্রাম্পের এই বক্তব্যের বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে হোয়াইট হাউসকে প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন, ‘চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খুব ভালো এবং জাপানের সঙ্গেও সম্পর্ক খুব ভালো, তারা আমাদের প্রিয় ও ঘনিষ্ঠ মিত্র। আমরা জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং আরও অনেক দেশের সঙ্গে চমৎকার সব বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। বিশ্ব শান্তিতে আছে, এটিকে শান্তিতে থাকতে দিন।’

চীনের সঙ্গে জাপানের বিরোধ তীব্রতর হওয়া এবং এ নিয়ে ট্রাম্পের প্রকাশ্য নীরবতা টোকিওর উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

চীন সরকার নিজেদের নাগরিকদের জাপান ভ্রমণে না যেতে অনুরোধ করেছে। এতে জাপানের পর্যটন খাতেও বড় ধাক্কা লেগেছে।

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রয়টার্সের কাছে তাকাইচির সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপের সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দুই নেতা মার্কিন-চীন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে সেখানে তাঁদের আলাপের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রথম ট্রাম্প-তাকাইচি ফোনালাপ এবং ট্রাম্পের টোকিওকে বেইজিংয়ের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে বলার খবর প্রকাশ করে।

রয়টার্স

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.