সন্দ্বীপের শিক্ষা কর্মকর্তার ভিডিও ভাইরাল, নানা সমালোচনা

0
23
মো. আসলাম খান, ছবি: স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত

খালি গায়ে নিজের কার্যালয়ের সামনে বসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সম্বোধন করে চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন। আবার নিজ কার্যালয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে গানের সুরে সুরে বলছেন মাদক গ্রহণের কথা। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসলাম খানের এমন কয়েকটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তার এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে অনেকেই সমালোচনায় মেতে উঠেছেন।

মো. আসলাম খান নামের ওই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলায়। ৯ অক্টোবর তিনি বান্দরবানের থানচি উপজেলা থেকে বদলি হয়ে সন্দ্বীপে যোগদান করেছেন।

গানে গানে মাদক গ্রহণের কথা বলার যে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি নওশাদ আকরাম নামের স্থানীয় এক সংবাদকর্মীকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ধারণ করা। নওশাদ বলেন, তিনি ২৩ অক্টোবর কিছু অভিযোগের বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন। অনুমতি নিয়েই সাক্ষাৎকারের ভিডিও ধারণ হচ্ছিল। কিন্তু ২০ মিনিটের সাক্ষাৎকারে অভিযোগের জবাব না দিয়ে অসংলগ্ন নানা কথাবার্তা বলে গেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা। এরই এক ফাঁকে তিনি সুরে সুরে মাদক গ্রহণের কথা বলেন।

ইউএনওকে সম্বোধন করে চিৎকার-চেঁচামেচির ভিডিওটি কখন ধারণ করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফেসবুকের একাধিক আইডি-পেজে ভিডিওটি শেয়ার করতে দেখা গেছে। ‘সন্দ্বীপ সংযোগ’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার মো. আসলাম খানের ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি ২২ ঘণ্টায় ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ দেখেন। পোস্টটির মন্তব্যের ঘরে ফছিহুল আলম নামে একজন মন্তব্য করেন, ‘সন্দ্বীপ উপজেলা যেন এক পুনর্বাসন কেন্দ্র’। মো. আল মামুন নামে একজন লেখেন, ‘এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সন্দ্বীপে একটা ব্রিজ প্রয়োজন।’ মোস্তফা শামীম নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘শিক্ষা অফিসারের এ অবস্থা হলে, শিক্ষার কী পরিণতি হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানচিতে কর্মরত অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিসংক্রান্ত মৌলিক প্রশিক্ষণ চলাকালে এক যুগ্ম সচিবকে গালিগালাজের কারণে তাঁকে গত ১৭ জুলাই কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলা শাখা। আসলাম খান নোটিশের জবাব দেননি, ফলে সরকারি আদেশ অমান্য ও অসদাচরণের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এরপর তাঁকে সন্দ্বীপে বদলি করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানচিতে কর্মরত অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিসংক্রান্ত মৌলিক প্রশিক্ষণ চলাকালে এক যুগ্ম সচিবকে গালিগালাজের কারণে তাঁকে গত ১৭ জুলাই কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলা শাখা। আসলাম খান নোটিশের জবাব দেননি, ফলে সরকারি আদেশ অমান্য ও অসদাচরণের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এরপর তাঁকে সন্দ্বীপে বদলি করা হয়।

ভিডিও দুটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসলাম খান। এসব বদলি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় বলে জানান তিনি। মো. আসলাম খান বলেন, ‘কর্মজীবনে এটি আমার ৩২তম বদলি। আমি ৮ থেকে ১০ বার বিভাগীয় মামলার মুখোমুখি হয়েছি। এখন এসবই আমার পরম বন্ধু। শাস্তিমূলক বদলি হিসেবে আমাকে থানচিতে বদলি করা হয়েছিল, আর উচ্চ শাস্তিমূলক বদলি হিসেবে এখন আমি সন্দ্বীপে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ বলেছেন, তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। খোঁজ নিয়ে বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করবেন এবং বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন। মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক এস এম মোসলেম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা পর্যায় থেকে জেলা অফিস হয়ে কোনো অভিযোগ আসলে আমরা আমলে নেব।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.