শাপলা প্রতীক পেয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এনসিপি: সারজিস আলম

0
18
দিনাজপুরে দলীয় কর্মীসভা শেষে বক্তব্য রাখছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। রোববার দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে

নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও যোগ্যতার প্রশ্ন তুলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘যে নির্বাচন কমিশন একটা রাজনৈতিক দলকে তার প্রাপ্য মার্কাটা দেওয়ার সৎ সাহস দেখাতে পারে না, সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন এই বাংলাদেশে হতে পারে না।

এনসিপি প্রত্যাশা করে শাপলা প্রতীক পেয়েই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। যদি শাপলা প্রতীক দিতে এনসিপির সঙ্গে অন্যায় করা হয় তাহলে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে।’

আজ রোববার দুপুরে দিনাজপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দলের কর্মিসভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সারজিস আলম। এর আগে বেলা ১১টা থেকে দলের বিভিন্ন উপজেলার নেতা–কর্মীরা জড়ো হন মিলনায়তনে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা দলের নেতা–কর্মীদের তৃণমূল পর্যায়ে কমিটি গঠনসহ সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন সারজিস আলম।

সারজিস আলম বলেন, ‘যাঁরা আইন পড়ান, আইন তৈরি করেন, এ রকম অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা জানিয়েছেন এনসিপিকে শাপলা প্রতীক দিতে আইনগত কোনো বাধা নেই। নেই বলেই আমরা শাপলা প্রতীক চেয়েছি। আজ উনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) কোন মুখে এই কথা বলেন। যেদিন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলাম, সেদিনই এই প্রতীক চেয়েছিলাম। তাহলে বিগত কয়েক মাসে এই প্রতীক কেন তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন নাই। হয় তাঁরা খামখেয়ালিপনায় এটা অন্তর্ভুক্ত করেন নাই অথবা কারও প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সৎ সাহস দেখাতে পারেন নাই।’

জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার বিষয়ে সারজিস বলেন, ‘জুলাই সনদ আপনারাও চান, আমরাও চাই। আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো নামকাওয়াস্তে একটা পেপারের মতো জুলাই সনদ চান, তাহলে ওই সনদ আমরা চাই না। আমরা জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি চাই। সেই সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চাই। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের সব সচেতন মানুষ এমনকি অন্য রাজনৈতিক দলের মানুষও চায় জুলাই সনদে যে সংস্কারগুলোর কথা বলা আছে সেটার বাস্তবায়ন।’

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চেয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘জুলাই সনদের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিএনপি নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে রেখেছে। আমরা মনে করি অন্যান্য ৭০টি সংস্কারের চাইতে ওই সাতটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ওই জায়গাগুলোতে পলিসি কী হবে? যদি সনদটা গণভোটে পাস হয় তাহলে ওই গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো হবে কি না, এটা অন্তর্বর্তী সরকারকে নিশ্চয়তা দিতে হবে। যদি হয় সনদে আমাদের স্বাক্ষর করতে কোনো বাধা থাকবে না।’

সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজন ও জুলাই যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে এনসিপি নেতা সারজিস বলেন, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পূর্বে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সনদ স্বাক্ষরের প্রেক্ষাপট বা দিন ধার্য করা হয় নাই। এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। পুরো বাংলাদেশের মানুষ যার যার অবস্থান থেকে স্বপ্ন দেখছিল সুন্দর আয়োজনের মধ্য দিয়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষর হবে, এই এই সংস্কারগুলো হবে। কিন্তু সনদ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দেখে মনে হলো যেন তাদের কোনো একটা চাওয়া আছে, খুব দ্রুত শেষ করার একটা তাড়া আছে। এই তাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কে এল, কে এল না, এসব চিন্তা না করে তারা জুলাই সনদ স্বাক্ষর করল।’

সারজিস আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মানিক মিয়া এভিনিউতে লক্ষাধিক মানুষ নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব ছিল। তাহলে গেজেটেড জুলাই যোদ্ধা ও হাজারের মতো শহীদ পরিবারের জন্য কেন আসনের ব্যবস্থা হলো না।

সারজিস বলেন, ‘শুধু গতানুগতিক কয়েকটা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি-অফিসার-আমলাদের নিয়ে অনুষ্ঠান বানালেন, তাহলে যাঁদের নিয়ে এই অভ্যুত্থান হলো তাঁদের অংশগ্রহণটা কোথায়। এই কাজ জুলাই ঘোষণাপত্রের দিনও করা হয়েছে। শহীদ পরিবার কিংবা জুলাই যোদ্ধারা একটা ক্ষোভের জায়গা থেকে অপ্রত্যাশিত পদ্ধতিতে ওইখানে (অনুষ্ঠানস্থলে) প্রবেশ করেছে। যদিও পদ্ধতিটা তাঁদের ভুল ছিল। কিন্তু এটার দায়তো অন্তর্বর্তী সরকার এড়াতে পারে না। সেদিন প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাঁদের (জুলাই যোদ্ধাদের) যেভাবে উন্মুক্তভাবে পেটানো হয়েছে, আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়েছে, এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য লজ্জার। আমরা আহ্বান করব, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে ডেকে তাঁদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করার।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.