নোবেল জয়ে ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মাচাদোকে অভিনন্দন জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

0
22
ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। রাজধানী কারাকাসে প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর তৃতীয় মেয়াদের শপথের আগে এক বিক্ষোভে, ৯ জানুয়ারি ২০২৫, ছবি: রয়টার্স

ভেনেজুয়েলার বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো আজ শুক্রবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। নরওয়ের নোবেল কমিটির মতে, ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত এবং দেশটির গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে অবদান রাখার জন্য তাঁকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়েছে, এক বছর ধরে আত্মগোপনে আছেন মাচাদো। তাঁর জীবন গুরুতর হুমকির মুখে থাকা সত্ত্বেও তিনি ভেনেজুয়েলায় নিজ দেশেই আছেন, যা লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি দেশের বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করেছেন। ভেনেজুয়েলায় সামরিকীকরণের বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সব সময় ছিলেন অটল।

নোবেল পুরস্কার কমিটির সচিব ক্রিশ্চিয়ান বার্গ হার্পভিকেনকে ফোনে ৫৮ বছর বয়সী মাচাদো বলেন, ‘ওহ ঈশ্বর…আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।…আমি আপনাদের অনেক ধন্যবাদ জানাই। আমার আশা, আপনারা বুঝবেন এটি একটি আন্দোলন, এটি পুরো সমাজের অর্জন। আমি শুধু একজন মানুষ। আমি কোনোভাবেই এর যোগ্য নই।’

উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্ম

মারিয়া কোরিনা মাচাদো ১৯৬৭ সালের ৭ অক্টোবর ভেনেজুয়েলার রাজধানী কারাকাসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন ভেনেজুয়েলার ইস্পাতশিল্পের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী।

মারিয়া কারাকাসের আন্দ্রেস বেলো ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি এবং একই শহরের ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইইএসএ) থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৯২ সালে মারিয়া অ্যাথেনিয়া ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা কারাকাসের পথশিশুদের কল্যাণে কাজ করে। উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্ম হওয়ায় তিনি সহজেই শাসক সমাজতান্ত্রিক দলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।

ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। রাজধানী কারাকাসে প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর তৃতীয় মেয়াদের শপথের আগে এক বিক্ষোভে, ৯ জানুয়ারি ২০২৫, ছবি: রয়টার্স

রাজনৈতিক জীবন

বার্তা সংস্থা এপি জানায়, রাজনীতিতে প্রবেশের আগে ‘সুমাতে’ নামক একটি ভোট পর্যবেক্ষণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন মাচাদো। ২০১০ সালে বিরোধীদলীয় জোট থেকে তিনি ভেনেজুয়েলার জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১২ সালে ‘ভেন্তে ভেনেজুয়েলা’ নামের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন মারিয়া। ২০১৪ সালে তিনি নিকোলা মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন এবং রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হন।

মাচাদো ভেনেজুয়েলায় উদার অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রবক্তা। তিনি ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি ‘পিডিভিএসএ’-সহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারীকরণে পক্ষপাতী। এ ছাড়া দেশের সবচেয়ে দরিদ্র নাগরিকদের জন্য কল্যাণমূলক কর্মসূচি চালুরও বড় সমর্থক তিনি।

‘ওহ ঈশ্বর…আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।…আমি আপনাদের অনেক ধন্যবাদ জানাই। আমার আশা, আপনারা বুঝবেন এটি একটি আন্দোলন, এটি পুরো সমাজের অর্জন। আমি শুধু একজন মানুষ। আমি কোনোভাবেই এর যোগ্য নই।’

নোবেল পুরস্কার লাভের পর মারিয়া কোরিনা মাচাদোর প্রতিক্রিয়া

সংঘবদ্ধ সংগ্রাম

মাচাদো কখনো কখনো আত্মকেন্দ্রিক বা অহংকারী হিসেবে সমালোচিত হয়েছেন। এমনকি তাঁর মা-ও তাঁর এই বৈশিষ্ট্যের সমালোচনা করেছেন। তবে তিনি প্রকাশ্যে নিজের সম্পর্কে খুব কম কথা বলেন।

মারিয়া নিজের কর্মজীবনকে ‘মুক্তি ও ঐক্যের’ সামগ্রিক সংগ্রাম বলতে ভালোবাসেন। অর্থনৈতিক সংকট ও সামাজিক অবক্ষয়ের মুখে থাকা ভেনেজুয়েলার মানুষের মধ্যে আশা জাগিয়ে রাখাকে নিজের জীবনের প্রধান দায়িত্ব বলে মনে করেন মাচাদো।

আত্মগোপন

২০২৩ সালে মাচাদো ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রাথমিক বাছাইয়ে মনোনীত হন। তবে তাঁকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এই পরিস্থিতিতে তাঁর সহযোগী অ্যাডমান্ডো গঞ্জালেস বিরোধীদলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন। মাচাদো তাঁকে সমর্থন দেন এবং তাঁর পক্ষে প্রচারে অংশ নেন।

গত বছরের জুলাইয়ের সেই বিতর্কিত নির্বাচনে ভেনেজুয়েলার নির্বাচন কর্তৃপক্ষ ও সর্বোচ্চ আদালত প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে তৃতীয়বারের মতো জয়ী ঘোষণা করেন। বিরোধীরা ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলে এই ফলাফল নাকচ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

প্রেসিডেন্ট মাদুরো কঠোর হাতে বিক্ষোভ দমন শুরু করেন। এতে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী নিহত হন। বিরোধীদলীয় অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সরকারের নিপীড়নের মুখে গঞ্জালেস কিছুদিন আত্মগোপনে থাকার পর দেশ ছেড়ে চলে যান। কিন্তু ঝুঁকি নিয়ে এখনো দেশে আত্মগোপনে রয়েছেন মাচাদো।

ব্যক্তিগত জীবন

মাচাদো তিন সন্তানের জননী। জীবনের প্রতি হুমকি থাকায় তাঁর সন্তানেরা বিদেশে বসবাস করেন। তিনি একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। এসব পুরস্কারের মধ্যে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে দেওয়া ‘ভাচলাভ হাভেল হিউম্যান রাইটস প্রাইজ’ এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ‘সাখারভ প্রাইজ’ অন্যতম। মানবাধিকার রক্ষায় বিশেষ অবদান এবং স্বাধীন চিন্তাধারার জন্য এ দুটি পুরস্কার দেওয়া হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.