
- বিএনপিসহ কিছু দল চায় জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট।
- জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কিছু দল চায় নির্বাচনের আগে গণভোট।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক মতবিরোধ রেখেই দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অনড় অবস্থানের মুখে ঐকমত্য কমিশন বলেছে, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বয় করে আগামী দু–এক দিনের মধ্যে কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে।
১৫ থেকে সর্বোচ্চ ১৭ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদে স্বাক্ষর হবে বলে কমিশন আশা করছে।
গতকাল বুধবার বেলা তিনটায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দলগুলোর সঙ্গে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে পঞ্চম ও শেষ দিনের আলোচনা শুরু হয়। আলোচনা শেষ হয় রাত সোয়া ১১টায়। আলোচনা বিটিভি নিউজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
গতকাল শেষ দিনের আলোচনায় দলগুলোকে মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়তে দেখা গেছে। বিএনপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোটের পক্ষে অনড় থাকে। আর জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে অবস্থান নেয়। গণভোটের প্রশ্ন কী থাকবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে—এসব প্রশ্নেও সুরাহা হয়নি।
ছয়টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ।
সনদ বাস্তবায়নের উপায় ঠিক করতে ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। এর পাশাপাশি কমিশন ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। গতকাল পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে কমিশন। এর মধ্যে গত রোববার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সম্মতি নিতে গণভোট করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়।
কিন্তু গণভোট কবে ও কিসের ভিত্তিতে হবে, ভিন্নমতের কী হবে—এগুলো নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা ছিল। গতকাল বেলা তিনটার দিকে দলগুলোর সঙ্গে মুলতবি আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। শুরুতে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ দলগুলোকে গণভোটের সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে দীর্ঘ আলোচনায় দলগুলো কমবেশি আগের অবস্থানই তুলে ধরে। ফলে শেষ পর্যন্ত ঐকমত্য হয়নি।
গতকাল শেষ দিনের আলোচনায় দলগুলোকে মোটাদাগে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়তে দেখা গেছে। বিএনপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোটের পক্ষে অনড় থাকে। আর জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কিছু দল জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের পক্ষে অবস্থান নেয়। গণভোটের প্রশ্ন কী থাকবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে—এসব প্রশ্নেও সুরাহা হয়নি।
বিএনপির অবস্থান
জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট দেওয়ার পক্ষে মত তুলে ধরে বিএনপি। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ বেশ কিছু দল সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট দেওয়ার পক্ষে।
আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের অল্প সময় বাকি আছে। এর আগে গণভোটের মতো মহাযজ্ঞ আয়োজন করা সম্ভব নয়। এতে অতিরিক্ত অর্থও খরচ হবে। তাঁরা মনে করেন, আগে গণভোট করার প্রস্তাব জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার প্রয়াস হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ বা এ ধরনের কোনো আদেশ নয় বরং একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা যায়। সেটার নাম আদেশ হতে পারে। তার ভিত্তিতে গণভোটের জন্য একটি নতুন আইন অধ্যাদেশ আকারে করা যায়। তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোট হলে আগামী সংসদকে আলাদা গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করবে। গণভোটে জুলাই সনদ পাস হলে তা বাস্তবায়ন করা আগামী সংসদের জন্য বাধ্যতামূলক হবে।

আগামী সংসদ জুলাই সনদের বাইরে সংস্কার করতে পারবে না তা নয় উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই সনদের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতেই হবে। প্রয়োজনে আরও সংশোধনী আনতে পারবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, জুলাই সনদে সব দলের ভিন্নমতে কে কী বলেছে, তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত থাকতে হবে। আর সনদের অঙ্গীকারে একটি বিষয় যুক্ত করতে হবে, যেসব দলের যে যে বিষয়ে ভিন্নমত আছে, সেগুলো তারা নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করবে। জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হলে সে দল তাদের ভিন্নমত অনুসারে প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে পারবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনে জুলাই সনদের প্রস্তাব বাস্তবায়নের কথা বলেছে। কিন্তু তিনি প্রশ্ন রাখেন, সেটা করতে হলে প্রথম অধিবেশন কত লম্বা হবে, যদি দুই বছর লাগে? তিনি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে সংসদকে সময় বেঁধে দেওয়া ঠিক হবে না। সংসদের স্বাধীনতা থাকতে হবে, প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। এখানে যথা শিগগির সম্ভব আগামী সংসদ সনদ বাস্তবায়ন করবে, এভাবে এটি উল্লেখ করা যেতে পারে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ আলোচনায় বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বা মধ্যভাগে গণভোট হতে পারে।
জামায়াত ও এনসিপির অবস্থান
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ আলোচনায় বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বা মধ্যভাগে গণভোট হতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিন গণভোট হলে কিছু জটিলতা তৈরি হবে। তিনি বলেন, মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো সনদ থেকে বাদ দিয়ে গণভোট দিলে তা ঠিক হবে না। কোনো দলের মতামত জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি আইনজীবী শিশির মনির বলেন, বিশেষ সংবিধান আদেশ বা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রয়োজন আছে। এই আদেশে গণভোটের কথা বলা থাকবে। আদেশের তফসিলে জুলাই সনদ থাকবে। এই আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে।
আগামী সংসদের দুটি ক্ষমতা থাকবে উল্লেখ করে শিশির মনির বলেন, একটি সাধারণ সংসদের ক্ষমতা, অন্যটি কনস্টুয়েন্ট পাওয়ার বা গাঠনিক ক্ষমতা। সংসদের প্রথম অধিবেশনে এই ক্ষমতা থাকবে। দ্বিতীয় অধিবেশন থেকে সাধারণ সংসদ কাজ করবে। এভাবে হলে সংস্কার টেকসই হবে। তিনি বলেন, যে কটি বিষয়ে ভিন্নমত আছে, সেগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো না হলে সংস্কার মুখ থুবড়ে পড়বে।
এর আগে জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যায়, এমন মত দিলেও নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে এনসিপি। এখন দলটি বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট হতে হবে। আর গণভোট করতে হলে তার আগে একটি আদেশ জারি করতে হবে। এ ছাড়া আগামী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা পালনের ক্ষমতা দিতে হবে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, এমন প্রক্রিয়ায় যাওয়া ঠিক হবে না, যাতে সংস্কারগুলো ভবিষ্যতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বা বাতিল হয়ে যেতে পারে। সংস্কারকে টেকসই করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
যে নামেই হোক, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ আগে জারি করতে হবে উল্লেখ করে জাবেদ রাসিন বলেন, এই আদেশের ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হবে কি না, এই প্রশ্নে গণভোট হবে এবং আগামী সংসদকে বিশেষ কনস্টিটুয়েন্ট পাওয়ার (গাঠনিক ক্ষমতা) দিতে হবে। কারণ, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সংস্কার করা হচ্ছে। এটি করতে হলে আগামী সংসদকে বিশেষ ক্ষমতা দিতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে গণভোট গুরুত্ব হারাবে।
এর আগে জাতীয় নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে গণভোট করা যায়, এমন মত দিলেও নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে এনসিপি। এখন দলটি বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট হতে হবে। আর গণভোট করতে হলে তার আগে একটি আদেশ জারি করতে হবে। এ ছাড়া আগামী সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা পালনের ক্ষমতা দিতে হবে।
বিএনপি-জামায়াতকে বসার অনুরোধ
আলোচনায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে আলাদাভাবে বসার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত বসেন। কথা বলে আপনারা ঠিক করেন। নিজেরা যদি ঠিক করে ফেলতে পারেন, তাহলে উই ক্যান গো ফর ইলেকশন।’
আলোচনায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম ও গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার বাইরে দলগুলো নিজেরা বসে ভিন্নমত কমিয়ে আনা যায় কি না, সে চেষ্টা করার পরামর্শ দেন।
এ ছাড়া আরও কোনো কোনো দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিএনপির পক্ষে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি প্রশ্নে ছাড় দেওয়া সম্ভব কি না, সেটা হলে দলগুলো বিশেষত জামায়াতের সঙ্গে নিম্নকক্ষে পিআরের দাবিতে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা যায়।
তবে আলোচনায় বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই সনদ প্রণয়ন প্রক্রিয়া ‘ক্লোজড চ্যাপটার’। এখন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে থাকাই ভালো হবে।
ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বিত করে আগামী দু–এক দিনের মধ্যে আলোচনা করে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদেরও এ বিষয়ে অবহিত করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ
গতকাল আলোচনার সমাপনী ভাষণে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। সেগুলো হলো: ১. একটি আদেশ জারি করতে হবে। ২. ওই আদেশের মাধ্যমে গণভোট আয়োজন করতে হবে। ৩. গণভোটে দুটি আলাদা প্রশ্ন থাকতে হবে, ঐকমত্য বা বৃহত্তর ঐকমত্য আছে যেসব বিষয়ে, সেগুলো নিয়ে একটি, আর ভিন্ন মত বা নোট অব ডিসেন্ট আছে যেসব বিষয়ে, সেগুলো নিয়ে আরেকটি। ৪. নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হবে। ৫. এই আদেশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গণভোটে অনুমোদন সাপেক্ষে জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত সংবিধান-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংস্কারসমূহ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করবে।
আলী রীয়াজ বলেন, বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত সমন্বিত করে আগামী দু–এক দিনের মধ্যে আলোচনা করে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হবে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদেরও এ বিষয়ে অবহিত করা হবে।
সমাপনী বক্তব্যে আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমরা সবাই জাতীয় ঐক্য রক্ষা করে একটি জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে সংগ্রাম, সেই সংগ্রামে আমরা সবার সহযোগিতা থাকবে। যে যেখানে থাকি, যেভাবে থাকি, যে দল করি, যে আদর্শে বিশ্বাস করি, আমাদের এই ঐক্য যেন বজায় থাকে, সেটা যেন অব্যাহত থাকে এবং আমরা যেন একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। যার অংশীদার হব আমরা এবং যেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তার সুফলটা ভোগ করতে পারে।’
এর আগে কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া এবং জাতীয় ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বক্তব্য দেন।
সংস্কারপ্রক্রিয়ার এক বছর
রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনার লক্ষ্যে প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। সেগুলো হলো সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কমিশন। গত ফেব্রুয়ারিতে এই কমিশনগুলো তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দেয়। সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই কমিশনের সভাপতি। অবশ্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় কমিশনের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
ছয়টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে কমিশন দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বে আলোচনা করে। প্রথম পর্বে ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে কমিশন। দ্বিতীয় পর্বে ২০টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে ২ জুন থেকে ৩০টি দলকে একসঙ্গে নিয়ে আলোচনা শুরু করে কমিশন। কমিশনের লক্ষ্য ছিল জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ সই করা; কিন্তু তা হয়নি। ৩১ জুলাই দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শেষ হয়। ২০টি মৌলিক প্রস্তাবের মধ্যে অন্তত ৯টিতে কোনো কোনো দল ভিন্নমত দেয়।
দুই পর্বের আলোচনার ভিত্তিতে মোট ৮৪টি প্রস্তাব (ভিন্নমতসহ) নিয়ে জুলাই সনদের খসড়া চূড়ান্ত করে ঐকমত্য কমিশন; কিন্তু সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে দুই পর্বের আলোচনায় মতৈক্য হয়নি। পরে দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক-আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে কমিশন। বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর লিখিত মতামতও নেওয়া হয়।