বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন বলেছেন, দেশের অর্থ পাচার করে বিদেশে নিয়ে যাওয়া ১০-১২টি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চিহ্নিত করেছে সরকার। এসব কুলাঙ্গারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে ঢালাওভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা ঠিক হবে না। এতে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর এক ধরনের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হতে পারে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘মাসিক সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও ব্যাংক একীভূতকরণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে।
ড. ফরাসউদ্দীন বলেন, বর্তমান সরকার অনেক ভালো কাজ করছে। আমাদের সবার উচিত এসব ভালো কাজকে উৎসাহ দেওয়া। যদিও সম্প্রতি দেশে দুর্নীতি বেড়েছে, তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর মুদ্রানীতির মাধ্যমে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের অর্থপাচারকারীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তবে কেউ যদি দোষ না করে, যেমন কারো স্ত্রী বা সন্তান নির্দোষ হয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হবে না।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা যদি একই হাতে কেন্দ্রীভূত হয়, তাহলে তা দেশের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। ১৯৭২ সালে যেখানে দেশের অর্থনীতির পরিমাণ ছিল ৯ বিলিয়ন ডলার, আজ তা বহুগুণে বেড়েছে। মাথাপিছু আয়ও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে দেশের অল্প কিছু মানুষের হাতেই অধিকাংশ সম্পদ কেন্দ্রীভূত। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও দেশে মাত্র ৪০ লাখ মানুষ আয়কর দেয়। প্রতিবছর করদাতা সংখ্যা ২০ লাখ করে বাড়াতে হবে। তাহলে বারবার একই ব্যক্তিদের ওপর করের চাপ পড়বে না।
সাবেক এ গভর্নর বলেন, দেশকে আরও এগিয়ে নিতে হলে সিএমএসএমই (ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প) খাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য কম সুদের ঋণ এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে সমাজের বৈষম্য কমবে, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং বেকারত্ব হ্রাস পাবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়াতে হলে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত আমানত বীমার আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।