খাগড়াছড়ির ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে আ. লীগের ‘ছাঁচ’ দেখছেন আনু মুহাম্মদ

0
37
‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কালক্রম: রামুসহ সারা দেশে বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞের ১৩ বছর এবং গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত অতিথিরা। আজ সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে

একটি মহল খাগড়াছড়িতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে এবং ভারত বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটছে—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, এটা ২০১২ সালে রামুর ঘটনার পর আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।

আজ সোমবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় আনু মুহাম্মদ এ কথা বলেন। ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কালক্রম: রামুসহ সারা দেশে বৌদ্ধ বিহারে হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞের ১৩ বছর এবং গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা’ শিরোনামে এই সভার আয়োজন করা হয়।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। তাঁর সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। সেখানে তিনি বলেন, ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যত সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, সেগুলোর একটিরও বিচার হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও মন্দির ও মাজারে হামলা এবং বৈষম্যবাদী ও জনতুষ্টিবাদীদের নানা তৎপরতা আছে। খাগড়াছড়ির ঘটনাটিও বিব্রতকর।

সভার সমাপনী বক্তব্যও দেন আনু মুহাম্মদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘রামু নিয়ে যখন আমরা আলোচনা করছি, খাগড়াছড়িতে তখন আগুন জ্বলছে।’

একটি মহল খাগড়াছড়িতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে, ভারত বা ফ্যাসিস্টদের ইন্ধনে এ ঘটনা ঘটছে—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এ বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘একের পর এক ব্যর্থতার কারণে এক ব্যক্তির পদত্যাগের দাবি উঠলেও তিনি বসে আছেন, তাঁর নির্লজ্জ হাসি এখনো দেখা যাচ্ছে। কোনো তদন্ত ছাড়াই খাগড়াছড়ির ঘটনায় ভারতের চক্রান্ত দেখছেন। এটা ২০১২ সালে রামুর ঘটনার পর আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। সে সময় বলা হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে রামুর ঘটনা ঘটেছে। যদিও পরে দেখা গেছে যে হামলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই জড়িত। এখনো সেই একই রকম ছাঁচ ও মডেল দেখা যাচ্ছে।’

পাহাড়ের মানুষ বিচ্ছিন্নতা চায় না, গণতান্ত্রিক অধিকার চায় উল্লেখ করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, পাহাড়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সরকারসহ সবাইকে একটা কাজ করতে হবে। পাহাড় ও সেখানকার জমি কার কার দখলে আছে, সেই তালিকা প্রকাশ করলেই বোঝা যাবে কার স্বার্থে সেখানে অশান্তি টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। গত কয়েক দশকে কতজনকে পাহাড় ইজারা দেওয়া হয়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। সেখানে যাওয়া উন্নয়ন বরাদ্দেরও কোনো হিসাব নেই।

‘দরকার শক্তির সমাবেশ’

অনলাইনে প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার) ও ‘মব’ সন্ত্রাস নিয়েও কথা বলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন কিশোরের নামে অভিযোগ তুলে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনলাইনে নারীবিদ্বেষী প্রচার ও আক্রমণ হচ্ছে। এর শিকার হয়ে অনেক নারী আর কথাই বলছেন না। সমাজে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। সবাই বুঝেশুনে আক্রমণ করছে, এমন নয়। মব সন্ত্রাসে যে জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যাচ্ছে, তা নয়। এর পেছনে শক্তিশালী চক্র ও পরিকল্পনা আছে। জনতাকে উসকানি দিয়ে উত্তেজিত করে মবে পরিণত করে যারা, তারা খুব গোছানো লোক।

নদী দখল, পাথর উত্তোলন, সাম্প্রদায়িক হামলা ও জমি দখলে বিভিন্ন দল–মতের একধরনের ঐক্য দেখা গেলেও এগুলোর বিরুদ্ধে ঐক্য দেখা যায় না বলে আক্ষেপ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর এসব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসার কথা থাকলেও তা আসেনি। বৈষম্য বৃদ্ধির মতাদর্শ ধারণকারীদের দাপট দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। তারা কোনো কিছুই শুনতে রাজি নয়। এই অবস্থা তৈরি হওয়াটা বিস্ময়কর ঘটনা নয়। নির্মোহভাবে দেখলে হতাশ হওয়ারও কিছু নেই। কারণ, অত্যাচারী ও আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকের পতন হলেও সম্প্রীতির যাত্রা বা বৈষম্যহীন যাত্রার জন্য আমাদের সামাজিক ও মতাদর্শিক প্রয়োজনীয় শক্তির সমাবেশ প্রস্তুত ছিল না। সেই শক্তির সমাবেশই এই অবস্থার পরিবর্তনের একমাত্র শর্ত।’

আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু। বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অর্থনীতিবদ ও লেখক সুজিত চৌধুরী, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বাসদের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য জয়দীপ ভট্টাচার্য, লেখক তাহমিদাল জামী, শিল্পী ও গবেষক অরূপ রাহী এবং গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ফেরদৌস আরা রুমি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.