বাসমতী ছাড়া অন্য চাল রপ্তানিতে নতুন শর্ত দিল ভারত, বাংলাদেশে কী প্রভাব পড়বে

0
18
খুচরা দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন জাতের চাল

বাসমতী ছাড়া অন্য চাল রপ্তানিতে নতুন শর্ত আরোপ করেছে ভারত। শর্ত হলো এখন থেকে বাসমতী ছাড়া অন্যান্য চাল রপ্তানি করতে হলে অবশ্যই কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এপিইডিএ) নিবন্ধন নিতে হবে।

গতকাল বুধবার ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য দপ্তর (ডিজিএফটি) এ–সংক্রান্ত আদেশ জারি করে। নতুন শর্ত অনুযায়ী, এ ধরনের চাল (নন–বাসমতী) কেবল এপিডিএর সঙ্গে চুক্তি নিবন্ধনের পরই রপ্তানি করা যাবে।

বাংলাদেশ হলো ভারত থেকে নন–বাসমতী বা সাধারণ চালের অন্যতম বড় আমদানিকারক দেশ। গত অর্থবছরে ছয় লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ সরকার। আমদানি করা চালের সিংহভাগই এসেছে ভারত থেকে।

ভারতের নতুন শর্তের কারণে চাল আমদানিতে নতুন করে অশুল্ক বাধা সৃষ্টি হতে পারে, যা চাল আমদানিতে প্রভাব পড়তে পারে। ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশ থেকেও চাল আমদানি করে থাকে বাংলাদেশ।

এমন এক সময় ভারত চাল রপ্তানিতে নতুন শর্ত দিল, যখন দেশটির চালের মজুত ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। সম্প্রতি রয়টার্সের এক সংবাদে বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর হিসাব অনুযায়ী, ভারতের সরকারি গুদামে চালের মজুত গত বছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেড়ে ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। একই সময়ে গমের মজুতও গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে।

ভারত গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যেমন বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিকসহ বেশ কিছু পণ্য রপ্তানিতে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় স্থলবন্দরগুলো দিয়ে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। ফলে স্থলপথে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় এসব পণ্য রপ্তানি করা যাবে না।

বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে নতুন করে ৯ ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। পণ্যগুলো হলো ফ্ল্যাক্স সুতার বর্জ্য, কাঁচা পাট, পাটের রোল, ফ্ল্যাক্স সুতা, পাটের সুতা, ফুড গ্রেড সুতা, লিনেন কাপড়, লিনেন ও তুলার সুতা মিশ্রিত কাপড় এবং কম প্রক্রিয়াজাত বোনা কাপড়। সমুদ্রপথে মুম্বাইয়ের নভোসেবা বন্দর দিয়ে এসব বাংলাদেশি পণ্য ভারতে যেতে হবে।

ভারত কত চাল রপ্তানি করে

ইকোনমিক টাইমসের তথ্যানুসারে, বিশ্বে চালের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানিকারক দেশ ভারত চলতি অর্থবছরের এপ্রিল-আগস্ট সময়ে ৪৭০ কোটি ডলারের চাল রপ্তানি করেছে। এ সময় দেশটির চাল রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমন থাকবে, তা অনেকটা নির্ভর করে ভারতের ওপর। বিশ্ববাজারের ৪০ শতাংশ চাল রপ্তানি করে ভারত।

এর আগে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত বাসমতী ছাড়া অন্যান্য চাল রপ্তানি থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এর আগে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ নিশ্চিত ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর ১৪ মাস পর তারা সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

সরকারের ওই সিদ্ধান্তে ভারতের চাল রপ্তানিকারকেরা সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। এটিকে তাঁরা চালের বাজারের জন্য ‘গেম চেঞ্জার’ বা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে আখ্যা দেন।

মূলত ভারতে চালের উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে গত বছর রপ্তানি থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ভারত। এর পর থেকে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমতে শুরু করে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। ফলে কিছুদিন আগে চালের দাম আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। এখন আবার ভারতের এই সিদ্ধান্তে চালের বাজারে প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.