অবশেষে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে নতুন করে স্বীকৃতি দেওয়া পশ্চিমা দেশের তালিকায় যুক্ত হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশ ফ্রান্স।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) বার্ষিক অধিবেশনের আগে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক সম্মেলনে ফ্রান্সসহ ছয় দেশের নেতারা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দেন।
স্থানীয় সময় সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজিত ওই বৈঠকে ফ্রান্সের পাশাপাশি অ্যান্ডোরা, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা ও মোনাকো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দেয়। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পর্তুগাল ও যুক্তরাজ্যের নেতারাও বৈঠকে বক্তব্য রাখেন। যুক্তরাজ্য এর আগের দিনই আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন সম্মেলনে বলেন,
‘আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি কারণ সময় এসে গেছে। আমাদের দায়িত্ব হলো দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।’
তিনি এরপর ঘোষণা দেন, ‘আজ আমি ঘোষণা করছি, ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।’
এই স্বীকৃতির ফলে এখন জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ১৪৭টি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ৮০ শতাংশের বেশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ায় ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপ আরও বেড়েছে। গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যায় ইতোমধ্যে ৬৫ হাজার ৩০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর পুরো গাজা নগরী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গত বছর স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। গাজায় যুদ্ধের কারণে স্পেন ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করে।
সোমবারের (২২ সেপ্টেম্বর) সম্মেলনে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন,
‘যখন কোনো এক রাষ্ট্রের জনগণ গণহত্যার শিকার হয়, তখন দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান সম্ভব নয়। ফিলিস্তিনি জনগণ ধ্বংসের মুখে। তাই যুক্তি, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিক মর্যাদার স্বার্থে আমাদের এই হত্যাযজ্ঞ থামাতে হবে।’
সম্মেলনে দেয়া বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট ম্যাকরন যুদ্ধোত্তর সময়ে গাজার জন্য একটি নতুন কাঠামোর রূপরেখা দেন, যেখানে ‘নতুন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েনের কথাও বলা হয়, যা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে গাজায় শাসনভার গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা না পাওয়ায় জাতিসংঘ অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে না পারলেও ভিডিওবার্তায় বক্তব্য দেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তিনি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘যেসব দেশ এখনো স্বীকৃতি দেয়নি, আমরা তাদেরও আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিশ্চিত করার দাবিও জানাই।’
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ওই সম্মেলন বর্জন করে। ইসরায়েলের জাতিসংঘ দূত ড্যানি ড্যানন বৈঠকটিকে ‘সার্কাস’ বলে অভিহিত করেন।
যদিও জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তারপরও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পূর্ণ সদস্যপদ পেতে হলে নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বারবার ভেটো প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার পথে বাধা দিচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা।