মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘কাস্টিং কল’–এর ঘোষণা দেয়। ১৫ সেপ্টেম্বর সেই ঘোষণার চার দিনের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় চূড়ান্ত আয়োজন। আগের আসরের মতো সেই অর্থে ছিল না প্রচারণা, তাই এবার ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২৫’ নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে জানা গেল, বিজয়ীর মুকুট পেয়েছেন আলোচিত মডেল ও অভিনয়শিল্পী তানজিয়া জামান মিথিলা। কিন্তু আয়োজন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে ফ্যাশন অঙ্গনের মানুষেরাও কথা বলছেন। একই আয়োজনে দ্বিতীয়বার মিথিলার চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। আয়োজকেরা পরিষ্কার করেছেন তাঁদের অবস্থান। মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশের পরিচালক মুস্তাফা রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষের দিকনির্দেশনা মেনে তাঁরা পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন।

এর আগে একাধিকবার অনুষ্ঠিত হয়েছে মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ। আগের আসরগুলোয় আয়োজন নিয়ে থাকত আলোচনা। বাছাইপর্ব, গণমাধ্যমের সরব উপস্থিতি ও জমকালো গ্র্যান্ড ফিনালে—সবকিছু মিলেই জমে উঠত প্রতিযোগিতা। এবারের আসরে তার কিছুই ঘটেনি। চুপিসারে শুরু হয়ে চুপিসারেই শেষ হয়েছে আয়োজন। আয়োজকেরা জানিয়েছেন, ৫০–এর বেশি প্রতিযোগী নাম নিবন্ধন করেন। তাঁদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে বাছাই করা হয়। তারপর চূড়ান্ত রাউন্ডে বিজয়ীর মুকুট পান মিথিলা।

একজন অভিজ্ঞ মডেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এবারের প্রতিযোগিতা যেন আনুষ্ঠানিকতা পূরণের জন্যই করা হয়েছে। বিজয়ীর নাম আগেই ঠিক করা ছিল, এমন গুঞ্জনও আমরা শুনেছি।’ আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এটা প্রতিযোগিতা নয়, কাস্টিং কল। মাত্র ২–৩ দিনে প্রতিযোগিতা শেষ করে সেরা বেছে নেওয়া যায় না।’
আয়োজন যে ‘কাস্টিং কল’, তা স্বীকার করেছেন মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশের পরিচালক মুস্তাফা রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এবার ওরা (মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ) নতুন মুখ খুঁজছে। ওরা চাচ্ছে, নতুন একটা দেশ আসুক, প্রতিযোগিতায় ভালো করুক। এবার আমাদের টার্গেট, মুকুট নিয়ে আসা। আমরা যে লোকাল শো করেছি, তা আমাদের জন্য করা হয়নি, মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষের পরামর্শে হয়েছে। মিস ইউনিভার্স আমেরিকা তাতিয়ানা কালমেল যখন বাংলাদেশে এলেন, তখন কয়েকজন বাংলাদেশি মেয়েকে দেখেছিলেন। সেখানে অনেকের মধ্যে মিথিলাও ছিল। পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরাও সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন। এরপর মিস ইউনিভার্স কর্তৃপক্ষ আমাকে মেইল করে তাদের মতামত জানায়। তারা আমাকে বলে, ‘তুমি তো অনেক বড় করে অনুষ্ঠান করতে চাও, কিন্তু আমাদের দরকার একজন প্রতিযোগী, মিথিলার থেকে বড় প্রতিযোগী পাবে কি না? তোমরা এই মেয়েকে (তানজিয়া জামান মিথিলা) সিলেক্ট করো। আমাকে জানাও। এ ধরনের কথাবার্তার সব ডকুমেন্টও আছে আমার কাছে।’

রফিকুল ইসলাম জানান, মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার জন্য কাস্টিং কল আহ্বান করা হলে ৫০ জনের বেশি আগ্রহী প্রতিযোগী আবেদন করেন। এরপর সেখান থেকে পাঁচজনকে চূড়ান্ত করে ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার তেজগাঁওয়ের আলোকি মিলনায়তনে চূড়ান্ত আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ, সেখানেই মিথিলাকে চূড়ান্ত করা হয়। এ আয়োজনে বিচারক ছিলেন তমা মির্জা, মুস্তাফা রফিকুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান মুকুল, জান্নাতুল পিয়া ও রফিকুল ইসলাম।
‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২৫’ এর পরিচালক মুস্তাফা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রাইভেট কাস্টিং কল করছি। নেটফ্লিক্সের বিভিন্ন সিরিজে এমনটা দেখি, টম ক্রুজের সিনেমায়ও এ রকমটা দেখেছি। কারণ, খুবই সিম্পল, ওখানে অনেক বড় মাপের তারকারা আসেন, সেখান থেকে একজনকে ইন্টারনালি চূড়ান্ত করা হয়। কারা হারছে, কারা জিতছে, এটা বাইরে প্রকাশ করা হয় না। বাংলাদেশেও দেখবেন, শাকিব খানের সিনেমায় কোন নায়িকা চূড়ান্ত হয়েছে, এটা কিন্তু সবার শেষে জানা হয়। তার আগে কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা হয়, এরপর একজনকে চূড়ান্ত করা হয়। আমরা এবারের আয়োজনে একজন চূড়ান্ত করেছি, সেরা পাঁচের অন্যদের অবস্থান আমরা উল্লেখ করিনি।’

এদিকে মিস ইউনিভার্সের ফেসবুক পেজে উর্বানা বিনতে আসগর নামের একজন লিখেছেন, ‘একজন মানুষ কীভাবে দুবার বিজয়ী হতে পারে! এটা কি মজা নাকি! আর কে বলেছে, সে আগেরবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে যায়নি? সে তো গিয়েছিল, মিস ইউনিভার্স ২০২০–এ গিয়ে ভুলভাল ইংরেজি বলার জন্য ট্রলের শিকার হয়েছিল।’ কে এস চৌধুরী লিখেছেন, ‘অন্যদের কোনো সুযোগ দেওয়া হয় না।’
এদিকে সুন্দরী প্রতিযোগিতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘স্বচ্ছতা না থাকলে মিস ইউনিভার্সের মতো প্রতিযোগিতার গুরুত্ব কমে যায়। ছোট আয়োজন করা যেতে পারে, কিন্তু অংশগ্রহণকারীদের সময়, প্রস্তুতি ও মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছাড়া আসরের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।’

এ প্রসঙ্গে আয়োজকেরা জানিয়েছেন, ছোট পরিসরে আয়োজন করার পরামর্শ এসেছে মিস ইউনিভার্সের মূল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই। তাই দ্রুত আয়োজন সেরেছেন তাঁরা। তবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আগামী বছর মহা ধুমধামে আয়োজন করা হবে—দেশের সব বিভাগে হবে নাম নিবন্ধন, থাকছে বড় আয়োজনের পরিকল্পনা।

এর আগে ২০১৯ সালে শিরিন শিলা ও ২০২৪ সালে আনিকা আলম মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ হয়েছিলেন। ২০২০ সালে মিথিলা জাতীয় পর্যায়ে এ খেতাব জিতেছিলেন, তবে কোভিড–১৯ বিধিনিষেধের কারণে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেননি। সেই দুঃখ থাকলেও এবার নতুন উদ্যমে তৈরি হতে চান তিনি। আগামী নভেম্বরে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় ‘মিস ইউনিভার্স ইন্টারন্যাশনাল’–এর ৭৪তম প্রতিযোগিতার মঞ্চে বাংলাদেশ থেকে লড়বেন।
এমন একটি আয়োজনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার গৌরব অর্জনের সুযোগ পেয়ে আনন্দিত মিথিলা।
তিনি জানান, প্রতিযোগিতার আগে কাল রোববার ১০ দিনের জন্য ঢাকা ছাড়বেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ‘বাটারফ্লাই এজেন্সিতে আমি ১০ দিনের প্রশিক্ষণ নেব। সেখানে হাঁটা, গাউন, ন্যাশনাল কস্টিউম ও বিকিনি—এ চারটি বিষয় সম্পর্কে জানব। প্রশ্নোত্তর পর্ব কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, তার কৌশলও শেখানো হবে। এখন মাথায় শুধুই এই প্রতিযোগিতা, অন্য কিছু নিয়ে ভাবছি না।’