হঠাৎ প্রকাশ্যে নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী, দিলেন হুঁশিয়ারি

0
19
কে পি শর্মা অলি

সম্প্রতি নেপালে সংঘটিত জেন-জি বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ৯ দিন আত্মগোপনে থাকার পর অবশেষে প্রকাশ্যে এলেন কে পি শর্মা অলি। আর প্রকাশ্যে এসেই দেশবাসীকে হুঁশিয়ার করে বার্তা দিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত এ প্রধানমন্ত্রী।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) নেপালের সংবিধান দিবস উপলক্ষে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ নিয়ে মন্তব্য করেন অলি। শান্তিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হলেও বিক্ষোভে ষড়যন্ত্রকারীরা অনুপ্রবেশ করে অশান্তি সৃষ্টি করেছে বলে দাবি তার। খবর দ্য ইকোনমিক পোস্টের।

অলি তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, গত সপ্তাহের আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ বলা হলেও আসলে সেখানে কিছু লোক ঢুকে পড়েছিল। আন্দোলন আহ্বানকারীরাই স্বীকার করেছে যে বাইরে থেকে লোকজন অনুপ্রবেশ করেছিল। সেই অনুপ্রবেশকারীরাই সহিংসতা শুরু করে। এর ফলে কিছু তরুণ প্রাণ হারায়। সরকার বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর কোনও নির্দেশ দেয়নি।

পোস্টে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারের ব্যাপারে তদন্ত দাবি করেছেন তিনি এবং বলেছেন, এই ধরনের অস্ত্র নেপাল পুলিশ ব্যবহার করে না।

নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, যে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র পুলিশকে দেওয়া হয়নি, তার ব্যবহার নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। আমি আবারও এ ঘটনার জন্য শোক প্রকাশ করছি, প্রাণ হারানো তরুণদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।

এছাড়া আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতাকে দেশের বৃহত্তর সংকটের সঙ্গে যুক্ত করে অলি সতর্ক করে বলেছেন, নেপাল এখন সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ‘বড় ধরনের আঘাতের মুখোমুখি।’

তিনি দাবি করেছেন, তার পদত্যাগের পর সিংহ দরবারে অগ্নিসংযোগ হয়েছে, জাতীয় মানচিত্র পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এবং রাষ্ট্রের প্রতীকগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।

নেপালের চারবারের এ প্রধানমন্ত্রী আরও লিখেছেন, আমরা এখন আমাদের সংবিধানের ওপর বড় আঘাতের মুখোমুখি। আমি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করার পর সিংহ দরবারে আগুন লাগানো হয়েছে—নেপালের মানচিত্র পোড়ানো হয়েছে, জাতীয় প্রতীক মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান, বিচারব্যবস্থা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বেছে বেছে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সেনাবাহিনী সূত্রের বরাতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, সেনা নিরাপত্তায় ৯ দিন কাটানোর পর নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ওলি একটি ব্যক্তিগত জায়গায় চলে গেছেন। তবে, এখন থেকে তিনি কোথায় থাকবেন, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি।

গত ৪ সেপ্টেম্বর সরকারের আরোপিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা থেকে সূচনা হয় এই বিক্ষোভের। দ্রুত তা রূপ নেয় দুর্নীতি ও অভিজাত শ্রেণির অপচয়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিদ্রোহে। হাজার হাজার তরুণ-তরুণী রাস্তায় নামে, যাদের মতে সরকার জনগণের সঙ্গে সংযোগহীন ও কেবল নিজের স্বার্থে নিয়োজিত। বিক্ষোভগুলো সহিংস হয়ে ওঠে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভ ঘিরে সন সংঘটিত সহিংসতায় অন্তত ৭২ জন নিহত এবং দুই হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। সংসদ ভবন ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনসহ সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় গত ৯ সেপ্টেম্বর পদত্যাগে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.