সেই সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন বরখাস্ত

0
11
সুলতানা পারভীন। ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার মামলায় জেলা কারাগারে বন্দী থাকা সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার।

মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু, মোছা. সুলতানা পারভীন, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (যুগ্মসচিব), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় (প্রাক্তন জেলা প্রশাসক, কুড়িগ্রাম) গত ২ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রামের সিনিয়র দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে আদালত শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন।

তাই সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৩৯ (২) ধারা অনুযায়ী, সরকার তাকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা প্রয়োজন ও সমীচীন মনে করে এবং বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (যুগ্মসচিব) মোছা. সুলতানা পারভীনকে ২ সেপ্টেম্বর হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন। জনস্বার্থে জারিকৃত এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে, কুড়িগ্রামের সাবেক এই ডিসি সাংবাদিক আরিফের করা মামলায় গত ৩ আগস্ট হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করেন। হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এরপর সুলতানা পারভীন গত ২১ আগস্ট কুড়িগ্রাম জেলা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন।

আদালত ২ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন। সেদিন শুনানি শেষে আদালত আসামি সুলতানা পারভীনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। গত মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্ট আসামির ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করেন। তবে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে আটটা পর্যন্ত আসামি সুলতানা পারভীন কুড়িগ্রাম কারাগারেই বন্দি রয়েছেন বলে কারাগার সূত্রে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রাম শহরের একটি সরকারি পুকুর সংস্কার করে ডিসির নামে (সুলতানা সরোবর) নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফকে তার বসতবাড়ি ও বসতঘরের গেইট ভেঙ্গে তুলে নিয়ে যায় জেলা প্রশাসনের তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার উদ্দেশে জেলা শহরের পূর্বে ধরলা নদীর তীরে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ফিরিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে বিবস্ত্র করে পেটানো হয়।

এরপর মাদক রাখার অভিযোগ দেখিয়ে মধ্যরাতেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। এ নিয়ে সারাদেশে প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ শুরু হলে একদিন পর সাংবাদিক আরিফকে জামিন দেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। জামিনে মুক্তি পেয়ে কুড়িগ্রাম সদর থানায় তৎকালীন ডিসি সুলতানা পারভীন ও তিন ম্যাজিস্ট্রেটসহ অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৩৫ জনকে আসামি করে এজাহার দায়ের করেন।

পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশ। পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে ঘটনার দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। চার্জশিটে সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, তৎকালীন আরডিসি নাজিম উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা এবং এস এম রাহাতুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.