প্রথিতযশা লেখক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিক বদরুদ্দীন উমরের মরদেহ আজ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। সেখানে একে একে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান সাহিত্যিক, রাজনীতিক, গবেষক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে তার মরদেহ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। পরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের পালা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বুদ্ধিজীবী ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, বদরুদ্দীন উমর সবসময় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার রেখে যাওয়া পদচিহ্ন থেকে অনেক কিছু শেখা যাবে। অনেকের ধারণা ছিল, মার্কসবাদী ও বিপ্লবী ধারা শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু তা সত্য নয়।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে, বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট, এ ধারার পুনর্জাগরণের স্পষ্ট লক্ষণ পাওয়া গেছে।
ফরহাদ মজহার বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তির ভেতরেই সেই ধারা এখনও জীবিত এবং কার্যকর আছে।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, বদরুদ্দীন উমরের বিদায়ের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সমাপ্ত হল। তিনি যে আদর্শ ও দর্শনের ধারক ছিলেন, সেই দর্শনের আলোকে তার বিশ্লেষণ ইতিহাসে অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বদরুদ্দীন উমর ছিলেন দৃঢ়চেতা, আদর্শবাদী ও আপসহীন ব্যক্তিত্ব। তার অনুপস্থিতি গভীরভাবে অনুভূত হবে। তবে তার রচিত গ্রন্থসমূহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশক হয়ে থাকবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এ সময় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে জুরাইন কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
এর আগে, রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, লেখক, গবেষক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।
বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে দেশের বুদ্ধিজীবী মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবনের শুরু করেন বদরুদ্দীন উমর। পরবর্তীকালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বরেণ্য এই বুদ্ধিজীবী এক সময় পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০৩ সালে তিনি ‘জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং এর সভাপতির দায়িত্ব নেন।