টানা চারদিনে ৪৬ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

0
16
৪৬ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি

মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনীর সঙ্গে টানা ১১ মাস সংঘাতের পর গত বছরের আগস্টে রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহর নিয়ন্ত্রণে নেয় আরাকান আর্মি। এরপর থেকেই আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফে। নাফ নদ ও সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে প্রায়ই আরাকান আর্মির অপহরণের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি জেলেরা।

সবশেষ মাত্র ৯ দিনের ব্যবধানে ৫১ বাংলাদেশি জেলেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে মিয়ানমারে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। এর মধ্যে পরপর চারদিনেই অপহরণ হয়েছেন ৪৬ জেলে।

অপহরণ হয়ে যাওয়া ৫১ বাংলাদেশির একজনকেও এখন পর্যন্ত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। গত ১৭ আগস্ট থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত এসব অপহরণের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে সবশেষ ২৬ আগস্ট টেকনাফের নাফ নদের মোহনা থেকে দুটি মাছ ধরার ট্রলারসহ ১৩ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) স্থানীয় প্রশাসন ও জেলেদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১৭ আগস্ট ৫ জন, ২৩ আগস্ট ১২ জন, ২৪ আগস্ট ১৪ জন, ২৫ আগস্ট ৭ জন এবং ২৬ আগস্ট ১৩ জন বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। এই হিসাবে টানা চার দিনেই ৪৬ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী বাহিনীটি।

স্থানীয় জেলেরা বলছে, আরাকান আর্মি শাহপরীর দ্বীপের কাছাকাছি নাফ নদের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় স্পিডবোটযোগে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করছে জেলেদের। তাদের ধাওয়ায় গত মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) একটি ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। ওই সময় ছয় জেলেকে জীবিত উদ্ধার করে কোস্টগার্ড। এছাড়া নাফ নদের বাংলাদেশ অংশে ঢুকে যখন-তখন জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। এতে বড় ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে জেলেদের মধ্যে।

ট্রলার মালিকরা বলছেন, নাফ নদের ওপারে মিয়ানমার অংশে আরাকান আর্মি একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে, মাছ শিকারে যাওয়া জেলেরা বারবার অহরণের শিকার হচ্ছেন। মাঝেমধ্যে অপহৃত জেলেদের ফেরত দিলেও মাছ-জাল লুট করে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। গত কয়েক দিনে আতঙ্ক আরও জেঁকে বসেছে জেলেদের মনে। এ অবস্থায় জেলে পরিবারগুলো খেয়ে না খেয়ে দিন পারছে। অপহৃত জেলেদের ফেরার অপেক্ষায় আছেন তাদের স্বজনরা।

এ ব্যাপারে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট বিএন শাকিব মেহবুব জানান, বারবার জেলেদেরকে সতর্ক করার পরও তারা জলসীমা অতিক্রম করছে। এ কারণে এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। ইতোমধ্যে নাফ নদে কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে জলসীমানা অতিক্রম না করতে জেলেদের সতর্কও করা হচ্ছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, মূলত নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে ভাটার সময় জেলেদের নাইক্ষ্যংদিয়া হয়ে আসতে গিয়ে মিয়ানমারের জলসীমানা অতিক্রম করতে হয়। এ সুযোগে জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। অপহৃত জেলেদের দ্রুত কীভাবে ফেরত আনা যায়, সে বিষয়ে বিজিবি ও কোস্টগার্ড যৌথভাবে কাজ করছে। এছাড়া নাফ নদে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল এবং নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.