যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের পণ্য প্রবেশ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা ৫০ শতাংশ শুল্ক দুদিন (২৭ আগস্ট) পর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় তা কমানো নিয়ে আর জোরেশোরে দর–কষাকষি করার জন্য দ্বিতীয় একটি লবিং ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারত। এ জন্য ভারতকে প্রতি মাসে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ৯১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা) গুনতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ওয়াশিংটনে অবস্থিত ভারতের দূতাবাস মার্কিন লবিং প্রতিষ্ঠান মারকারি পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের সঙ্গে সম্প্রতি একটি চুক্তি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে তিন মাসের জন্য চুক্তি করা হয়েছে। প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠানটিকে দিতে হবে ৭৫ হাজার ডলার।
ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ লবিং প্রতিষ্ঠানটি ১৫ আগস্ট থেকে কাজ শুরু করেছে। তারা ভারতের হয়ে মার্কিন প্রশাসনের কাছে তদবির চালাবে এবং কৌশলগত যোগাযোগে সহায়তা দেবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের প্রভাব খাটানোর উদ্যোগ আরও জোরদার হয়েছে। কারণ, মার্কিন প্রশাসনে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে পাকিস্তানের তুলনায় ভারত পিছিয়ে পড়েছে, এমন একটি শঙ্কা নয়াদিল্লির কূটনৈতিক মহলে ছড়িয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে দ্বিতীয় লবিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করলেও রাশিয়া থেকে কম দামে অপরিশোধিত তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে ভারত। অথচ ভারতের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির জন্য এটাকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, গণমাধ্যম সম্পর্ক, ডিজিটাল অডিট এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কৌশল ও বিজ্ঞাপনের বিষয়ে ভারতকে কৌশলগত যোগাযোগে সহায়তা দেবে মারকারি পাবলিক অ্যাফেয়ার্স।
মারকারি অ্যাফেয়ার্সের অংশীদার ডেভিড ভিটার যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের সাবেক রিপাবলিকান সিনেটর। আরেক অংশীদার ব্রায়ান লানজা ২০২০ সালের ট্রাম্প ট্রানজিশন টিমের যোগাযোগ পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রানজিশন টিমের কাজ হলো নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের আসন্ন প্রশাসন কীভাবে গঠিত হবে, কোন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে বা কোন নীতিগুলো অগ্রাধিকার পাবে, ইত্যাদি ঠিক করা।
ভারতের পক্ষে লবিং করার জন্য ডেভিড ও ব্রায়ানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল কাজ করবে। এই চারজনের একজন হলেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটে প্রথম নির্বাচিত ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন কেভিন থমাস।
ব্রায়ান লানজা ২০১৬ সালে ট্রাম্প-পেন্স প্রেসিডেনশিয়াল ক্যাম্পেইনে ডেপুটি কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি সিনেট নির্বাচনের সময় জেডি ভ্যান্সের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন।
মারকারি পাবলিক অ্যাফেয়ার্স এর আগে কয়েকটি চীনা কোম্পানির পক্ষে লবিং করেছে। এসব চীনা কোম্পানি ট্রাম্প প্রশাসনের কোপানলে পড়েছিল।
মারকারি ২০১৮ সালে হাংঝো হিকভিশন ডিজিটাল টেকনোলজি কোম্পানির যুক্তরাষ্ট্র শাখার তরফে লবিং করেছিল। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলে নজরদারি প্রকল্পে কাজ করেছিল। এ কারণে কোম্পানিটিকে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন নিশানা করেছিল।
এ ছাড়া মারকারি জেডটিই কর্প নামের চীনের টেলিকম কোম্পানির পক্ষেও লবিং করেছিল। সেটার ওপরও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ছিল।
মার্কিন প্রশাসনে তদবির করার জন্য কোন দেশ বা বড় কোম্পানিগুলোর একাধিক লবিস্ট নিয়োগ দেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। একেক লবিং ফার্ম বা প্রতিষ্ঠান একেক ধরনের কাজ করে। কোনো দেশ বা কোম্পানি কখনো কখনো ছয়টি পর্যন্ত লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছে, এমন রেকর্ডও রয়েছে।
ভারতের লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি পাকিস্তানের কারণে বেশি আলোচিত হচ্ছে। কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের হঠাৎ করে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে।
পাকিস্তান যে লবিং ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করেছিল, সেটির পরিচালক ট্রাম্পের সাবেক বডিগার্ড কিথ শিলার, যাতে তারা ভারতের ওপর সুবিধা নিতে পারে। ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে এই ফার্মটি ইসলামাবাদকে সহায়তা করেছে।
ভারত চলতি বছরের এপ্রিলে এসএইচডব্লিউ পার্টনার্স এলএলসি নামের একটি লবিং ফার্মের সঙ্গেও চুক্তি করেছিল। এর পরিচালক ট্রাম্পের সাবেক সহকারী জেসন মিলার।
এসএইচডব্লিউ পার্টনার্স এলএলসিকে প্রতি মাসে দিতে হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ কোটি ৮২ লাখ ৬১ হাজার ২৫০ টাকা (দেড় লাখ ডলার)। সেই হিসাবে লবিং প্রতিষ্ঠানটিকে এখন পর্যন্ত দিতে হয়েছে প্রায় ২১ কোটি ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকা (১৮ লাখ ডলার)।
তথ্যসূত্র: ইকোনমিক টাইমস