মানবিকতা দেখিয়ে মানুষের হৃদয় জয় করা বিচারক ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও আর নেই

0
25
বিচারক ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও, ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত মিউনিসিপ্যাল বিচারক ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও গতকাল বুধবার শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বিচারকাজের নানা আইনি মারপ্যাঁচের মধ্যেও দয়া আর মানবিকতা দেখিয়ে কোটি কোটি মানুষের হৃদয় কেড়েছিলেন তিনি।

ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিওর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ক্যাপ্রিওর মৃত্যুর খবর তাঁর অফিশিয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টে জানানো হয়। বলা হয়, প্যানক্রিয়াটিক (অগ্ন্যাশয়) ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ ও সাহসী লড়াই শেষে তিনি শান্তিতে মারা গেছেন।

ক্যাপ্রিও এমন এক বিচারক ছিলেন, যিনি শুধু আইন প্রয়োগ করতেন না; বরং সহানুভূতির সঙ্গে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতেন। তিনি সাধারণত যেসব মামলা দেখতেন, সেগুলো অনেক সময় ছোটখাটো নিয়ম লঙ্ঘন বা ট্রাফিক–সংক্রান্ত হতো। কিন্তু সেসব মামলাতেও মানুষের ব্যথা, সমস্যা ও পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করতেন ক্যাপ্রিও।

ক্যাপ্রিও তাঁর আদালতকক্ষকে এমন এক স্থান হিসেবে বর্ণনা করতেন; যেখানে মামলাগুলো সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করার পাশাপাশি বিচারের মুখোমুখি হওয়া মানুষও সহমর্মিতা পেয়ে থাকেন। বিচারকালে টিকিট (জরিমানার টিকিট) বাতিল করে দেওয়ার জন্যও পরিচিত ছিলেন তিনি।

বিচারকাজে ক্যাপ্রিওর ইতিবাচক মনোভাব তাঁর শোর কোটি কোটি দর্শক এনে দিয়েছিল। তাঁর তুমুল জনপ্রিয় কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি শিশুদের তাঁর বেঞ্চে ডেকে আনছেন এবং তাদের সাহায্যে মা–বাবার ন্যায়বিচার করছেন।

সামাজিকমাধ্যমে ক্যাপ্রিওর খ্যাতি মূলত তাঁর শো ‘কট ইন প্রোভিডেন্স’ থেকে এসেছে। এটি তাঁর আদালতকক্ষ থেকে ধারণ করা হতো। ফ্র্যাঙ্কের সরল হাস্যরস, মানুষের প্রতি দয়া ও সহজ ভাষায় ন্যায়বিচারের চিত্র দেখানো হতো এতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর ছোট ছোট ক্লিপগুলো এক বিলিয়নেরও (শত কোটি) বেশি বার দেখা হয়েছে।

গত সপ্তাহে ক্যাপ্রিও ফেসবুকে একটি ছোট ভিডিও পোস্ট করেন। তাতে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার কথা জানান। তাঁর জন্য প্রার্থনা করতেও সবাইকে অনুরোধ জানান।

‘সবার জন্য স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার’ প্রবাদ দিয়ে বোঝায় যে ন্যায়বিচার সবার জন্য সহজলভ্য হওয়া উচিত। কিন্তু তা বাস্তবে হয় না।

ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও, রোড আইল্যান্ডের বিচারক

বিচারকের দায়িত্বে থাকাকালে ক্যাপ্রিও এমন এক ব্যক্তিত্ব তৈরি করেছিলেন, যা অনেকের সঙ্গে মিল খায় না। তাঁর মনোভাব ছিল বেশি সহমর্মিতার ও কম বিরূপ।

এক ভিডিওতে ক্যাপ্রিও বলেন, ‘সবার জন্য স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার’ প্রবাদ দিয়ে বোঝায় যে ন্যায়বিচার সবার জন্য সহজলভ্য হওয়া উচিত। কিন্তু তা বাস্তবে হয় না।

বিচারকাজে ক্যাপ্রিওর ইতিবাচক মনোভাব তাঁর শোর কোটি কোটি দর্শক এনে দিয়েছিল। তাঁর বেশ জনপ্রিয় কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি শিশুদের তাঁর বেঞ্চে ডেকে আনছেন এবং তাদের সাহায্যে মা–বাবার ন্যায়বিচার করছেন। একটি ভিডিওতে ক্যাপ্রিও সহানুভূতির সঙ্গে একজন নারীর কথা শোনেন। ওই নারীর ছেলে মারা গিয়েছিল। ক্যাপ্রিও তাঁর টিকিট ও ৪০০ ডলারের জরিমানা বাতিল করে দেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্যাপ্রিওর পরিবার তাঁকে ‘একজন নিষ্ঠাবান স্বামী, বাবা, দাদা, প্রপিতামহ ও বন্ধু’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। পরিবারের সদস্যরা লেখেন, সহানুভূতি, বিনয় এবং মানুষের মঙ্গলের প্রতি অটল বিশ্বাসের জন্য বিচারক ক্যাপ্রিও আদালতকক্ষ ও এর বাইরে কোটি কোটি মানুষের জীবন স্পর্শ করেছেন। ক্যাপ্রিওর আন্তরিকতা, হাস্যরস ও দয়া তাঁর পরিচিত সবার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে।

অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতিবিদেরা ক্যাপ্রিওর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।

ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিওর এক ভিডিওতে দেখা যায়, বিচারকালে তিনি সহানুভূতির সঙ্গে একজন নারীর কথা শুনছেন। ওই নারীর ছেলে মারা গিয়েছিল। ক্যাপ্রিও তাঁর টিকিট ও ৪০০ ডলারের জরিমানা বাতিল করে দেন।

রোড আইল্যান্ডের গভর্নর ড্যান ম্যাককি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘বিচারক ক্যাপ্রিও শুধু ভালো জনসেবা দেননি। তিনি মানুষের সঙ্গে গভীরভাবে সংযোগ স্থাপন করেছিলেন এবং মানুষ তাঁর উষ্ণতা ও সহমর্মিতার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাপ্রিও শুধু বিচারক ছিলেন না, ছিলেন আদালতে সহমর্মিতার প্রতীক। ন্যায়বিচার মানবিক হলে কী সম্ভব, সেটি আমাদের দেখিয়েছেন তিনি।’

প্রায় চার দশক বিচারক হিসেবে থাকার পর ক্যাপ্রিও ২০২৩ সালে আদালত থেকে অবসরে যান। তাঁর জীবনী অনুযায়ী, তিনি ছিলেন সাধারণ এক পরিবারের সন্তান, তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। বেড়ে উঠেছেন প্রোভিডেন্স শহরের ফেডারেল হিল এলাকায়।

আমি আশা করি, মানুষ বুঝবে যে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সদয় মনোভাব, ন্যায় ও সহমর্মিতা কাজে লাগিয়ে খুব ভালোভাবে কাজ করতে পারে। আমরা একটি বিবাদপূর্ণ সমাজে বসবাস করি।

ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও, রোড আইল্যান্ডের বিচারক

২০১৭ সালে সহৃদয় এ বিচারক বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি, মানুষ বুঝবে যে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সদয় মনোভাব, ন্যায় ও সহমর্মিতাকে কাজে লাগিয়ে খুব ভালোভাবে কাজ করতে পারে। আমরা একটি বিবাদপূর্ণ সমাজে বসবাস করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি, মানুষ দেখবে, আক্রমণাত্মক না হয়েও আমরা ন্যায়বিচার করতে পারি।’

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.