ইলন মাস্ক এবং জেনসেন হুয়াংয়ের মতে এআইয়ের এই যুগে যেসব বিষয় পড়া জরুরি

0
30
ইলন মাস্ক এবং জেনসেন হুয়াং

এই মুহূর্তে আমরা খুব অনিশ্চিত এবং নিয়ত পরিবর্তনশীল একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আরও উন্নত হচ্ছে, বদলে যাচ্ছে প্রযুক্তি। এর ফলে প্রভাব পড়ছে চাকরির বাজারে, কর্মক্ষেত্রে। অনেকেই শঙ্কিত হচ্ছেন, পাচ্ছেন চাকরি হারানোর ভয়। ফলে সবার মনেই নানা প্রশ্ন। এআইয়ের এই যুগে নিজেকে এগিয়ে রাখতে কী নিয়ে পড়াশোনা করা উচিৎ, কোন বিষয়গুলোর প্রতি মনযোগ দেওয়া উচিৎ—এসব প্রশ্ন ঘুরেফিরে বারবার আমাদের মনে উঁকি দিচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কথা হলো, চাকরির বাজার কিন্তু ছোট হচ্ছে না। বদলে যাচ্ছে কর্মক্ষেত্র। কম্পিউটার আসার আগের ও পরের যুগের কথা ভাবলেই বিষয়টা উপলব্ধি করা যায়। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা জানাচ্ছেন ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোর কথা, দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন তরুণদের। যেমন বিল গেটস বলেছেন, এআইয়ের এই যুগে প্রোগ্রামার, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং জীববিজ্ঞানীদের চাকরি হারানোর কোনো আশঙ্কা নেই

এদিকে স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক এবং এনভিডিয়ার প্রেসিডেন্ট ও সিইও জেনসেন হুয়াং বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁদের মতে, প্রোগ্রামিং নয়, শিক্ষার্থীদের মনযোগ দেওয়া উচিৎ পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে।

কেন গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান

এই দুই টেক-ব্যক্তিত্ব মনে করেন, ভবিষ্যতের পৃথিবীতে বড় ভূমিকা রাখবে রোবট। অর্থাৎ রোবটিকস শাখাটি হয়ে উঠবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর রোবট তৈরি করতে প্রয়োজন গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের মতো মৌলিক বিষয়গুলোর দক্ষতা। এর একটা সহজ উদাহরণ হলো, চ্যাটজিপিটি বা জেমিনির মতো এআই তৈরি কিংবা ভালো সফটওয়্যার তৈরি করতে কোডিং এবং সংশ্লিষ্ট গণিত জানলেই চলে। কিন্তু রোবটিকসে এর প্রয়োগ করতে গেলে, অর্থাৎ সেই সফটওয়্যার দিয়ে ভালো রোবট বানাতে হলে প্রয়োজন পড়বে পদার্থবিদ্যা এবং গাণিতিক জ্ঞান। সে জন্যই এই দুই প্রকৌশলী গুরুত্ব দিয়েছেন গণিত ও পদার্থবিদ্যায়।

ইলন মাস্ক
ইলন মাস্কফাইল ছবি: রয়টার্স

ইলন মাস্ক জোর দিচ্ছেন বহুমুখী জ্ঞান অর্জনের ওপর

টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স বা এআই স্টার্টআপ এক্সএআইয়ের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। এই প্রতিষ্ঠানটিই বাজারে এনেছে গ্রক। সেই ইলন মাস্ক মনে করেন, এখন একটা বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হওয়ার দিন ফুরিয়ে এসেছে। এর বদলে মাল্টিডিসিপ্লিনারি বা বহুমুখী জ্ঞান অর্জনের প্রতি জোর দেন মাস্ক। তাঁর মতে, এআই প্রায় সব ক্ষেত্রের কাজই সহজ করে দেবে। তাই শুধু কোডিং শেখা বা নির্দিষ্ট প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গোয়েজ নিয়ে পড়ে থাকার কোনো মানে নেই। বরং ইতিহাস, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলার মতো বিষয়গুলোও জানতে হবে। এর কারণ হিসেবে মাস্ক বলছেন, এআই স্মার্ট হলেও মানুষের মতো চিন্তা করা, আবেগ বোঝা বা নতুন আইডিয়া তৈরির ক্ষমতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেই। তাই আমাদের এআই পারে না, এমন বিষয়গুলোতে মনোযোগী হতে হবে। জটিল সমস্যার সমাধান করা শিখতে হবে, সৃজনশীল চিন্তা করতে পারতে হবে এবং কাজ করতে হবে দলবদ্ধভাবে। এতে সামষ্টিকভাবে এগিয়ে যেতে পারব আমরা।

এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেনসেন হুয়াং
এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেনসেন হুয়াংছবি: রয়টার্স

জেনসেন হুয়াং গুরুত্ব দিচ্ছেন ভৌত বিজ্ঞানকে

জেনসেন হুয়াং সম্প্রতি চীনের বেইজিংয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে এক সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, এখন যদি তিনি ২২ বছরের যুবক হতেন, তাহলে কী নিয়ে পড়াশোনা করতেন? এনভিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হুয়াংয়ের উত্তর, তিনি এখন যুবক হলে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করতেন না। হ্যাঁ, এআই বা সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কাজ করার জন্য ডেটা স্ট্রাকচার, অ্যালগরিদম বা প্রোগ্রামিং জানা প্রয়োজন, এটা ঠিক। তবে, হুয়াংয়ের মতে, বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো, জড়তা কিংবা এরকম ভৌত সূত্রগুলো বাস্তবে তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে কীভাবে প্রয়োগ করা যায়, তা জানা বেশি জরুরি। কেন, সেই কারণটি শুরুতেই বলেছি।

তাহলে কার কথা শুনব?

এই প্রশ্নটির একদম সরল উত্তর হলো, চাকরি বা কর্মক্ষেত্র বদলে যাচ্ছে ঠিকই, তবু বিজ্ঞান, ইতিহাস, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মক্ষেত্র ভবিষ্যতেও থাকবে। হয়তো এর ধরন বদলে যাবে। কিছু ক্ষেত্রে চাকরি বা জবের পরিমাণ হয়তো কমে যাবে, কিছু ক্ষেত্রে বাড়বে। ইলন মাস্ক ও জেনসেন হুয়াংয়ের কথা এ ক্ষেত্রে তাই একদমই বিপরীত নয়, বরং দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। একটি দিকে—বিশেষ করে পদার্থবিদ্যা, গণিত এবং প্রোগ্রামিং ভালো জানলেও—অন্য বিষয়গুলোতেও ধারণা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আবার এটাও মনে রাখা উচিৎ যে বিশেষজ্ঞদের সবার মতামত বা দর্শন এক নয়।

তাই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হলে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে গভীর জ্ঞান এবং মানবিক বোধ। শুধু কোড নয়, বরং সৃজনশীলতা, বাস্তবে জ্ঞান প্রয়োগের বিভিন্ন উপায়, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও মানবিক গুণাবলিই হবে ভবিষ্যতের মানব সভ্যতার অন্যতম পাথেয়।

লেখক: নাবিলা সুলতানা শিক্ষার্থী, পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

সূত্র: দ্য ইকোনোমিক টাইমস, টেক ওয়্যার এশিয়া, সিএনবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.