শুধু জাতীয় দল, ‘এ’ দল আর হাই পারফরম্যান্স দল মিলেই ক্রিকেটারের সংখ্যাটা ৬০–এর কিছু কমবেশি। সঙ্গে এই মুহূর্তের ব্যস্ততা জাতীয় লিগের আটটি বিভাগীয় দলের ৩০ জন করে ক্রিকেটার থেকে দলগুলোকে ১৫ জনে নামিয়ে আনা। কখনো কখনো ভবিষ্যৎ ক্রিকেটার খুঁজতে বয়সভিত্তিক পর্যায়ের ক্রিকেটও দেখতে হয় নিজেদের তাগিদে। বিস্ময়কর হলেও সত্যি, ছয় মাস ধরে দুই–আড়াই শ ক্রিকেটারের ওপর চোখ রাখার কাজটা করছেন মাত্র দুজন নির্বাচক!
গত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচকের দায়িত্ব ছেড়ে কোচিং পেশায় মনোনিবেশ করেছেন জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার হান্নান সরকার। এর পর থেকেই বিসিবি জাতীয় নির্বাচক প্যানেল কার্যত চলছে দুই সদস্য দিয়ে। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেনের সঙ্গে দ্বিতীয় সদস্য হিসেবে আছেন জাতীয় দলের সাবেক বাঁহাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাক। এই ছয় মাসে বেশ কয়েকবারই শোনা গেছে নির্বাচক কমিটির তৃতীয় সদস্য নেওয়ার কথা। মাঝে একবার মোটামুটি খবরই হয়ে গেল যে নারী দলের নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ আবারও ফিরছেন জাতীয় নির্বাচক কমিটিতে। কিন্তু হান্নান দায়িত্ব ছাড়ার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচক কমিটি চলছে দুই সদস্য দিয়েই।
অথচ এই ছয় মাসে দারুণ ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। শুধু জাতীয় দলই খেলেছে পাঁচটি আন্তর্জাতিক সিরিজ। হান্নান সরে যাওয়ার পর এপ্রিলে হয়েছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ। এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানে পিঠাপিঠি দুটি টি–টোয়েন্টি সিরিজ। শ্রীলঙ্কায় তিন সংস্করণের পূর্ণাঙ্গ সিরিজ হয়েছে জুন-জুলাইয়ে। আর দেশে ফিরে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজ।

এসবের সমান্তরালে ‘এ’ দল ঘরের মাঠে সিরিজ খেলেছে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া সফররত ‘এ’ দলও গঠন করতে হয়েছে নির্বাচকদের। মাঝে দক্ষিণ আফ্রিকা হাই পারফরম্যান্স দলের সঙ্গে সিরিজের জন্য গঠন করতে হয়েছে বিসিবি হাই পারফরম্যান্স দলও। শুধু দল গঠন করলেও হয় না, খেলাগুলো দেখতেও হয়। সেসব খেলা আবার এক জায়গায় নয়। ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, চট্টগ্রাম এবং দেশের বাইরে পালা করে ছুটতে হয়েছে এই দুই নির্বাচককেই।
বর্তমানে ‘এ’ দলের সঙ্গে রাজ্জাক যেমন আছেন অস্ট্রেলিয়ায়। জাতীয় লিগের দল চূড়ান্ত করতে গিয়ে তৃতীয় সদস্যের অভাবে দুই নির্বাচককে হোয়াটসঅ্যাপের আলোচনাতেই সারতে হচ্ছে কাজ। আন্তর্জাতিক সিরিজের দল নির্বাচন এবং খেলা দেখার পাশাপাশি নির্বাচক কমিটিকে চোখ রাখতে হয়েছে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগেও। অবশ্য টেলিভিশনে খেলা দেখানোয় রিমোটের বোতাম টিপে সেই চাপ কিছুটা কমাতে পেরেছে গাজী আশরাফ–রাজ্জাক জুটি।
সামনে ঘরের মাঠে নেদারল্যান্ডস সিরিজ, পরপরই আমিরাতে এশিয়া কাপ ক্রিকেট। তখন আবার দেশে চলবে জাতীয় ক্রিকেট লিগের টি–টোয়েন্টির আসর। জাতীয় লিগের চার দিনের ম্যাচের সময় ঘরের মাঠে হবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ হয়ে যাবে এর আগেই।

নির্বাচকদের চাপ কমাতে এই সময়ে জাতীয় লিগ দেখতে গেম ডেভেলপমেন্টের কোচদেরও পাঠানোর চিন্তা আছে বিসিবির। গেম ডেভেলপমেন্টের দুই কোচ ওয়াহিদুল গণি ও গোলাম ফারুককে খেলা দেখতে পাঠিয়ে এই রীতি অবশ্য শুরু হয়েছে গত জাতীয় লিগের চার দিনের আসরেই।
মাত্র একজন সঙ্গী নিয়ে নির্বাচক কমিটি চালানোর অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘তৃতীয় একজন থাকলে তো অবশ্যই আরও ভালোভাবে কাজ করা যেত। তিনটা মত থাকলে পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন সবই ভালো হয়। বেশি আলোচনা করার সুযোগ থাকে। কাজের চাপও কম পড়ে।’
নির্বাচক কমিটিতে তৃতীয় সদস্য কবে দেখা যাবে, জানতে চাইলে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান নাজমূল আবেদীন আবারও আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘বিসিবি সভাপতি ১৮ আগস্ট দেশে ফিরবেন। তিনি ফেরার পরপরই আমরা এটা করে ফেলব।’ সম্ভাব্য কে হতে পারেন তৃতীয় নির্বাচক, তা অবশ্য তিনি বলেননি, ‘অনেকের নামই আলোচনায় আছে। আমরা বসে একজনকে চূড়ান্ত করব।’