
জুলাই ঘোষণাপত্র থেকে নারীকে সচেতনভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র পুরোটা পড়েছি। এর প্রতিটি শব্দ বোঝার চেষ্টা করেছি। কোথাও নারীর উল্লেখ নেই। জুলাই ঘোষণাপত্র থেকে নারীকে সচেতনভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।’
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ‘সংসদে নারী আসন ও নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব কথা বলেন। এই গোলটেবিলের আয়োজন করেছে প্রথম আলো। গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সুমনা শারমীন। এতে সংসদে নারী আসন নিয়ে ধারণাপত্র তুলে ধরেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আখতার।
আলোচনায় খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র যারা করেছেন, তার ভেতরে তরুণ প্রতিনিধিরা রয়েছেন। তরুণদের দল রয়েছে। তারা এমনটি দেখেও কীভাবে এটিকে সমর্থন করেছেন, সেটা নিয়ে আমার প্রশ্ন রয়েছে। আমি মনে করি, ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে সবার সুস্পষ্ট অবস্থান আজকেই দেওয়া প্রয়োজন।’
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘যদি এমন হতো যে ঘোষণাপত্রে সব গোষ্ঠীকেই বাদ দেওয়া হয়েছে, তাহলে বুঝতাম যে কোনো গোষ্ঠীকেই টার্গেট করা হয়নি। কিন্তু এখানে কয়েকটি গোষ্ঠীকে নেওয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনোটিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই বলছি, নারীকে এখানে সচেতনভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ রকম একটি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বৈষম্যবিহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখতে পারি না।’
আগামী সংসদে নারী নেতৃত্ব আরও কমবে এমন দাবি করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘আমি সচেতনভাবে চ্যালেঞ্জ করছি যে, আগামী সংসদে নারী নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত যা দেখেছেন তার থেকে অনেক কম হবে। জেনে রাখবেন, আমরা কোনো ভালো দিকে যাচ্ছি না। এটা বলার কারণ, বাংলাদেশ এক ধরনের ইসলামিকরণের দিকে যাচ্ছে। এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সচেতনভাবেই সেটি করেছে। দলগুলোয় এখন পর্যন্ত নারীকে নামমাত্র রাখা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই নামমাত্র অবস্থায়ও (সারফেস লেভেলেও) নারীকে দেখতে পাবেন না। সম্ভবত নারীর নিজেকে আরও গুটিয়ে নিতে হবে। সমাধানের জন্য নির্বাচন পরবর্তীকালে আমাদের কার্যক্রম নিতে হবে।’

নারীর মূল ক্ষমতায়নের জায়গাটি রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর থেকে হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এবার যতগুলো কমিশন হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক দল সংস্কার নিয়ে কোনো কমিশন নেই বলেন তিনি। সেটিকে সচেতনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলেন তিনি। রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের ঘাটতির কারণে বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
সংসদে নারীদের আলংকারিকভাবে দেখা হয় উল্লেখ করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোয় নারীরা আছেন। কিন্তু তাঁরা সেখানে যান শুধু কোরাম পূরণ করতে। সেখানে গিয়ে তাঁরা তেমন অংশগ্রহণ করেন না। তাঁরা আগ্রহও পান না। তাঁদের বক্তব্যও গুরুত্ব পায় না। কাজেই নারীরা সংসদে গেলেই কিন্তু সমাধান হচ্ছে না। তবে এটি প্রথম ধাপ হতে পারে।’
নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে এর সমাধান হিসেবে দেখছেন খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সমাধান না হওয়ার কারণও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘সমাধান হচ্ছে সংসদে । কিন্তু সেটি হচ্ছে না। কারণ, তাঁরা সংরক্ষিত আসন ও নির্বাচন ছাড়া আসছেন দেখে, জনপ্রতিনিধিত্বের বোধ তাঁদের আসে না। সেই কারণে সরাসরি নির্বাচনের দাবি। আগামী দিনগুলোয় রাজনৈতিক দলগুলোর নারী নেতৃত্ব সংস্কারের জায়গাগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আমি অনুরোধ করব, যাঁরা লিঙ্গবৈষম্য এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করেন, তাঁরা উদ্যোগ নিয়ে লিঙ্গ-সম্পর্কিত সংসদীয় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে পারেন।’
গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়েছেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভীন হক, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, নারীপক্ষের সভানেত্রী গীতা দাস, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য ইলিরা দেওয়ান, জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও শিক্ষার্থী নাজিফা জান্নাত।