ভারতীয় পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পর থেকে বড় সমস্যার মুখে পড়েছে ভারতের পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠান পার্ল গ্লোবাল। যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে গ্যাপ ও কোলসের মতো প্রতিষ্ঠান। এখন রাতবিরাতে যুক্তরাষ্ট্রের এসব প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফোনকল আসছে।
ফোন করে পার্ল গ্লোবালকে নানা আল্টিমেটাম দেওয়া হচ্ছে। তাদের বলা হচ্ছে বাড়তি শুল্কের বোঝা নিজেদের ঘাড়ে নিতে। ভারতের বাইরে অন্য দেশে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার কথাও উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন ক্রেতাদের শান্ত রাখতে পোশাকের উৎপাদন বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও গুয়াতেমালায় নিজেদের ১৭টি কারখানার সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে পার্ল গ্লোবাল।
প্রতিষ্ঠানটির নেওয়া এই কৌশলের লক্ষ্য ভারতের ওপর ট্রাম্পের আরোপ করা উচ্চহারে শুল্ক এড়ানো। রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পার্ল গ্লোবালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এরই মধ্যে সব ক্রেতা আমাকে ফোন করছেন। তাঁরা চান, আমরা যেন উৎপাদন ভারত থেকে সরিয়ে অন্য কোনো দেশে নিয়ে যাই।’
ট্রাম্প প্রথম পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন গত এপ্রিল মাসে। তখন তৈরি পোশাকশিল্পে প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও চীনের চেয়ে ভারতের ওপর আরোপ করা শুল্কের পরিমাণ কম ছিল। এ থেকে নিজেদের ১ হাজার ৬০০ কোটি (১৬ বিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানি বাজার দ্রুত সম্প্রসারণের একটি একটি সুযোগ তৈরি হয়েছিল ভারতের।
এর পর থেকে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ত হতে থাকে। এর প্রভাব পড়ে শুল্কে। ভারতের ওপর এখন যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তি শুল্ক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার দণ্ড হিসেবে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। অন্যদিকে পোশাকশিল্পে ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের ওপর পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ। আর চীনের ওপর ৩০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
পার্ল গ্লোবাল প্রায় অর্ধেক ব্যবসা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে। পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কিছু ক্রেতা এই শর্ত দিয়েছে যে শুল্ক ভাগাভাগি করলেই কেবল তারা পার্ল গ্লোবালের কাছ থেকে পণ্য কিনবে। তবে এটি কার্যকর কোনো সমাধান নয়। ওই ক্রেতা কারা—এমন প্রশ্নের জবাবে তাদের নাম উল্লেখ করেননি পার্ল গ্লোবালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ভারতের পোশাক রপ্তানিকারকেরা যদি দেশের বাইরে উৎপাদন শুরু করে, তাহলে তা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বা ‘ভারতে তৈরি’ নীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা।
ভাবা হচ্ছে নেপাল–ইথিওপিয়ার কথাও
আলাপ–আলোচনার পর ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার তেল কেনার শাস্তি হিসেবে পরে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। ভারতকে ২৮ আগস্ট থেকে সব মিলিয়ে বাড়তি ৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাকশিল্পে নেপাল ও ইথিওপিয়ার মতো কম প্রতিষ্ঠিত দেশগুলোতে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবছে ভারতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
ভারতের পোশাক খাত ইতিমধ্যেই শ্রমিক–সংকট এবং সীমিত উৎপাদন সক্ষমতার মতো সমস্যায় রয়েছে। এখন ভারতের পোশাক রপ্তানিকারকেরা যদি দেশের বাইরে উৎপাদন শুরু করে, তাহলে তা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বা ‘ভারতে তৈরি’ নীতির জন্য একটি বড় ধাক্কা। তাই তো ট্রাম্পের নতুন শুল্ককে ‘চরম দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়েছে নয়াদিল্লি।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের ফরমাশ অনুযায়ী পণ্য সরবরাহের জন্য পার্ল গ্লোবাল হয়তো বিদেশে নিজেদের কারখানাগুলো ব্যবহার করতে পারবে। তবে ভারতে তৈরি পোশাকের যেসব রপ্তানিকারক শুধু দেশের ভেতরের কারখানাগুলোর ওপর নির্ভর করে, তাদের ওপর ধাক্কাটা বড় হবে। যেমন রিচাকো এক্সপোর্ট।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ১১ কোটি ১০ লাখ (১১১ মিলিয়ন) ডলারের তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে রিচাকো এক্সপোর্ট। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীনেশ রাহেজা বলেন, এই পণ্যগুলোর সবই ভারতজুড়ে রিচাকোর দুই ডজনের বেশি কারখানায় তৈরি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ভারতীয় আয়ের প্রায় ৯৫ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
রয়টার্সকে দীনেশ রাহেজা বলেন, ‘আমরা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে একটি উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে ভাবছি। ভারতের পোশাক খাত এখন অচল অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’
রয়টার্স, মুম্বাই