
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নিজের সম্ভাব্য বৈঠকটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আজ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
আজ মস্কোতে আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন পুতিন। এ সময় ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আলোচিত বৈঠকটি কোথায় হতে পারে, তা জানতে চান সাংবাদিকেরা। জবাবে পুতিন বলেন, রাশিয়ার ‘অনেক বন্ধু’ আছে, যারা বৈঠকের আয়োজনে সহায়তা করতে প্রস্তুত।
এরপর পুতিন বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট আমাদের সেই বন্ধুদের একজন। চিন্তাভাবনা করে আমরা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করব। আমার কাছে এটি (ইউএই) সম্ভাব্য বৈঠকের স্থান হিসেবে বেশ উপযুক্ত জায়গা বলে মনে হয়।’
এর আগ আজ ক্রেমলিনের জ্যেষ্ঠ আলোচক কিরিল দিমিত্রিয়েভ জানিয়েছেন, পুতিন ও ট্রাম্পের মধ্যে বৈঠকের সম্ভাব্য স্থান চূড়ান্ত হয়ে গেছে। সব ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বহুল প্রত্যাশিত এই বৈঠক ‘ঐতিহাসিক’ হয়ে উঠতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

আজ ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুতিন ও ট্রাম্পের একান্ত বৈঠকের প্রস্তুতি এরই মধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এখন বৈঠকের বিভিন্ন দিক নিয়ে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে।
পুতিনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগের অন্যতম মুখ্য আলোচক দিমিত্রিয়েভ আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ‘এটি সম্ভবত ঐতিহাসিক বৈঠক হতে যাচ্ছে।’ লেখার সঙ্গে তিনি শান্তির প্রতীক পায়রার একটি ইমোজি যুক্ত করেছেন। লেখেন, ‘সংলাপই জয়ী হবে।’
ট্রাম্প-পুতিনের এই বৈঠকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে কি না, তা জানা যায়নি। তবে এই বৈঠকে চুক্তি স্বাক্ষরিত না হলেও তা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার ওপর ভিত্তি করে পরে হয়তো চুক্তি হবে।
গতকাল বুধবার ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ বৈঠককে ‘কার্যকর ও গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে ট্রাম্পও এই বৈঠককে ‘বেশ ফলপ্রসূ’ এবং ‘অপ্রত্যাশিতভাবে ইতিবাচক’ বলে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্য করেন।
গত জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন ট্রাম্প। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে গতকালের আগেও উইটকফ একাধিকবার মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু আলোচনায় তেমন অগ্রগতি হয়নি। এ নিয়ে ট্রাম্প সম্প্রতি প্রকাশ্যে কয়েকবার হতাশা প্রকাশ করেছেন। রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
৮ আগস্টের আগেই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়া শান্তি চুক্তিতে রাজি না হলে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে বলে ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন। তা ছাড়া যেসব দেশ রাশিয়া থেকে জ্বালানি কিনছে, তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। কিন্তু পরে তিনি স্বীকার করছেন, এটি তাঁর ধারণার চেয়ে অনেক জটিল ও কঠিন।
রাশিয়া বারবার বলেছে, তারা যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি করতে প্রস্তুত। তবে সে জন্য সংকটের মূল কারণ নিয়ে কথা বলতে হবে। চুক্তিতে তার প্রতিফলন থাকতে হবে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে পুতিনের কিছু শর্ত রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে তিনি আপস করছেন না। এসব শর্তের কয়েকটি হলো পূর্ব ইউরোপের তথা রাশিয়ার প্রতিবেশী আর কোনো দেশকে ন্যাটোর সদস্য করা যাবে না। এটির আইনি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। অর্থাৎ ইউক্রেন ন্যাটো বা অন্য কোনো সামরিক জোটে যুক্ত হতে পারবে না। ইউক্রেনে রুশ ভাষাভাষীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এখন পর্যন্ত ইউক্রেনে যেসব ভূখণ্ড দখল করা হয়েছে, তা রাশিয়ার বলে স্বীকার করে নিতে হবে।
কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেন কখনোই রাশিয়ার দখলদারি স্বীকার করে নেবে না। তা ছাড়া ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কিয়েভের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সার্বভৌম অধিকার রয়েছে। এতে কেউ বাধা দিতে পারবে না।
‘গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব’ পেয়েছে মস্কো
ইউক্রেন সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘গ্রহণযোগ্য’ প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেমলিনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ। আজ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উইটকফের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। মার্কিনদের কাছ থেকে একটি প্রস্তাব এসেছে, যা আমরা বিবেচনা করতে প্রস্তুত, কিন্তু তা নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।’
তথ্যসূত্র:আরটি