মারা গেছেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) ও বেসরকারি সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক এম শমশের আলী (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
রোববার (৩ আগস্ট) বাউবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শনিবার দিবাগত রাত দুইটায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বিশিষ্ট এই পরমাণুবিজ্ঞানী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
বাউবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই পুত্রবধূসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন শমশের আলী। তার জানাজা আজ বাদ জোহর ধানমন্ডির বায়তুল আমান জামে মসজিদ অনুষ্ঠিত হবে।
শমশের আলীর মৃত্যুতে বাউবি পরিবার গভীর শোক জানিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ বাউবিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বাউবির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম শোকবার্তায় বলেন, শমশের আলী বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞানচর্চার জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। তিনি একাধারে একজন নিষ্ঠাবান গবেষক, চিন্তাশীল শিক্ষক ও সমাজসেবী ছিলেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে উচ্চশিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, যা আজ দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তার দূরদর্শিতা, গবেষণাভিত্তিক চিন্তা, মানবকল্যাণে নিবেদিত সাধনা ও সর্বজনীন শিক্ষার বিস্তারে অসামান্য অবদান দেশের শিক্ষা-বিজ্ঞান অঙ্গনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার অনুপস্থিতি জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
প্রসঙ্গত, এম শমশের আলী ১৯৩৭ সালের ২১ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক সূত্রে তিনি যশোর সদর থানার সিঙ্গিয়া গ্রামের (বর্তমানে বসুন্দিয়া) লোক ছিলেন। তার বাবার নাম আমীর আলী এবং মাতা রহিমা খাতুন।
শমশের আলীর শিক্ষা শুরু হয় চুয়াডাঙ্গা এলাকার স্থানীয় ইউসুফ মাস্টারের স্কুলে। পিতার চাকরির কারণে তারা সপরিবারে চলে যান ভারতের চব্বিশ পরগনার রানাঘাটে। সেখানে শমশের আলীকে ভর্তি করে দেওয়া হয় লালগোপাল স্কুলে। এখানে দুবছর লেখাপড়ার পর ভারত ভাগের কারণে ১৯৪৮ সালে তারা সপরিবারে ফিরে আসেন যশোরে। এবং এখানেই বসবাস করতে শুরু করেন। এরপর তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয় যশোর জিলা স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে। এবং এই স্কুল থেকেই তিনি ১৯৫৪ সালে ম্যাট্টিক পাস করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। ১৯৫৬ সালে এই কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। কলেজ জীবন শেষে তিনি ১৯৫৬ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার পছন্দের বিষয় ছিল পদার্থবিজ্ঞান। ১৯৫৯ সালে শ্রেষ্ঠত্বের সাথে অনার্স এবং ১৯৬০ সালে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন এবং ১৯৬৫ সালে সেই ম্যানচেস্টার থেকেই থিওরেটিক্যাল নিউক্লিয়ার ফিজিক্স বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬১ সালে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করার পর ১৯৬৫ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি ঢাকায় আণবিক শক্তি কেন্দ্রে সিনিয়র সায়িন্টিফিক অফিসার হিসেবে যোগ দেন। কর্মদক্ষতার জন্য তিনি ১৯৭০ সালে অত্যন্ত অল্প বয়সে আণবিক শক্তি কমিশনের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১-১৯৮২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর যাবৎ ড. এম শমসের আলী আণবিক শক্তি কমিশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা স্পেশাল সাইটেশনের মাধ্যমে ড. আলীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি প্রফেসর অব ফিজিক্স করে তাকে একটা বিরল সম্মাননা প্রদান করে। ১৯৮২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব অব্যাহত ছিলেন। ১৯৯২-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সাল হতে ২০১০ সাল সময় পর্যন্ত সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।