রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ–গুলি, উত্তর জেলা আহ্বায়কসহ আহত ২০

0
28
সংঘর্ষের সময় পুড়িয়ে দেওয়া মোটরসাইকেল। আজ বিকেলে, ছবি: বিএনপির এক পক্ষের পাঠানো

চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম–রাঙামাটি সড়কের সত্তারহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী নেতা–কর্মীদের বহর নিয়ে উপজেলা বিএনপির প্রয়াত সভাপতির কবর জিয়ারত করতে যান গোলাম আকবর খন্দকার। একই দিন আগামী ৯ আগস্ট সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে পূর্বনির্ধারিত মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার কর্মসূচি ছিল গিয়াস উদ্দিন কাদেরের অনুসারীদের। গোলাম আকবর তাঁর বহর নিয়ে সত্তারহাট এলাকায় পৌঁছালে সেখানে অবস্থান নেওয়া গিয়াস উদ্দিন কাদেরের অনুসারীদের মুখোমুখি হন। ওই সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন।

ঘটনাস্থলের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গোলাম আকবরের বহরের একটি পাজেরো জিপের সামনের–পেছনের কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। গাড়ির ভেতরেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কয়েকটি মোটরসাইকেল। ঘটনার পরপরই যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেখানে পুলিশ আসার পর সড়কের এক পাশে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

রাউজানে সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর করা গাড়ি। আজ বিকেলে
রাউজানে সংঘর্ষের সময় ভাঙচুর করা গাড়ি। আজ বিকেলে, ছবি: বিএনপির এক পক্ষের পাঠানো

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার আজ বিকেলে বলেন, ‘আমরা কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিলাম। গিয়াস উদ্দিন কাদেরের অনুসারীরা গহিরায় সড়ক বন্ধ করে রাখেন। আমরা যখন রাউজান সত্তারহাট এলাকায় পৌঁছি, তখন আমাদের ওপর হামলা শুরু করেন। তাঁরা গুলিও করেন। তখন আমার ঘাড়ে ছররা গুলির আঘাত লেগেছে।’

গোলাম আকবর দাবি করেন, তাঁর ব্যক্তিগত সহকারীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি সপ্তাহখানেক ধরে অসুস্থ। ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানি না। ঘুমে ছিলাম।’

গিয়াস উদ্দিন কাদেরের অনুসারী রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ আহমেদ বলেন, জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপনকে ভন্ডুল করতে আজকের এ পরিকল্পিত হামলা। যুবদলের শান্তিপূর্ণ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় এলোপাতাড়ি গুলি করে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। ফটিকছড়ি থেকে সন্ত্রাসী এনে গোলাম আকবরের লোকজন হামলা চালান।

আহত উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার। আজ বিকেলে
আহত উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার। আজ বিকেলে, ছবি: বিএনপির এক পক্ষের পাঠানো

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়া বিকেলে বলেন, এক পক্ষ কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিল, আরেক পক্ষ শোভাযাত্রায় ছিল। সত্তারহাট এলাকায় গোলাম আকবর খন্দকার তাঁর অনুসারীদের গাড়িবহর নিয়ে যাওয়ার সময় দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শুরুতে কিছুটা সময় যান চলাচল বন্ধ থাকলেও পরে স্বাভাবিক হয়।

উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.