কার্যকর ব্যথানাশক হিসেবে হরহামেশাই ব্যবহার হয়ে থাকে ‘অ্যাস্পিরিন’। তবে, সাধারণ এ ওষুধই ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও সহায়ক হতে পারে বলে দেখা গেছে নতুন এক গবেষণায়। বিশেষ করে কোলন ক্যানসার এবং অন্যান্য কিছু ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকারিতা দেখিয়েছে ওষুধটি।
সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে দ্য নেচার পত্রিকায়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন।
গবেষণায় জীবজন্তুদের ওপরে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওষুধটি ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে, অ্যাস্পিরিন ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে সব মানুষ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দৈনিক অ্যাস্পিরিন সেবন করে থাকেন, তাদের ক্যানসার ধরা পড়লেও বাঁচার সুযোগ তুলনামূলকভাবে বেশি।
অ্যাস্পিরিনের ক্যানসার প্রতিরোধী প্রভাব মূলত শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত। স্বাভাবিকভাবে যখন ক্যানসার কোষ মূল টিউমার থেকে আলাদা হয়ে রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে, তখন টি-সেল নামে এক ধরনের শ্বেত রক্তকণিকা এ কোষগুলোর সন্ধান করে এবং ধ্বংস করে। কিন্তু প্লাটিলেট (রক্তে জমাট বাঁধার জন্য দায়ী ছোট কোষীয় কণা) এ প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, অ্যাস্পিরিন ক্যানসারের মেটাস্ট্যাসিস (শরীরে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়া) রোধ করতে সহায়ক হতে পারে। ক্যানসারের মেটাস্ট্যাসিস বা ক্যানসার শরীরে ছড়িয়ে পড়ার কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা মারা যান। ক্যান্সারের কোষ মূল টিউমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন টিউমার তৈরি করে।
এ বিচ্ছিন্ন ক্যানসার কোষগুলো যখন শরীরের অন্যান্য স্থানে বসতি স্থাপনের চেষ্টা করে, তখন অ্যাস্পিরিন শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তাদের ধ্বংস করতে সাহায্য করতে পারে।
তবে, মাত্রাতিরিক্ত অ্যাস্পিরিন ব্যবহারের ফলে স্ট্রোক ছাড়াও শরীরের মধ্যে রক্তক্ষরণ হতে পারে, যেগুলো অবহেলা করা উচিত নয় বলে সতর্ক করেছেন গবেষকরা।
যাদের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ানোর জন্য দায়ী ‘লিচ সিন্ড্রোম’ রয়েছে, তাদেরকে অ্যাস্পিরিন নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। কিন্তু আগামী দিনে আর কোন কোন ক্ষেত্রে এটি দেওয়া সম্ভব এখন তা নিয়েই গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা।