দেশে দেশে কেন্দ্র্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনা বাড়ছে, ৪৩% আরও কিনতে চায়

0
23
সোনা, ফাইল ছবি রয়টার্স

বিশ্ববাজারে সোনার দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ প্রবণতা বেড়েছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) সেন্ট্রাল ব্যাংক গোল্ড রিজার্ভ সার্ভে ২০২৫-এ বলা হয়েছে, ৪৩ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বর্ণ ভান্ডার বৃদ্ধি করতে আগ্রহী।

সেই সঙ্গে জরিপে আরও জানা গেছে, ৯৫ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, আগামী ১২ মাসের জন্য পর্যাপ্ত সোনা মজুত আছে তাদের কোষাগারে। বাস্তবতা হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ডলারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করায় অনেক দেশ এখন ডলারের বিকল্প খুঁজছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনা বেড়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইনভেস্টর ডট কম বলছে, গত বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হাতে যে সোনা ছিল, তা ছিল সরকারি রিজার্ভের প্রায় ২০ শতাংশ বা প্রায় ৩৬ হাজার ২০০ টন। ২০২৩ সালের শেষে এই হার ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ। আইএমএফের তথ্যানুসারে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এ বছর অতিরিক্ত ৯০০ টন সোনা কিনবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সোনার প্রতি এ ঝোঁকের মূল কারণ হচ্ছে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলার ব্যবহারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর আস্থা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী দেশগুলোর আর্থিক কর্তৃপক্ষ সম্ভবত ডলারের বিকল্প হিসেবে সোনা কেনা অব্যাহত রাখবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলো—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা একদিকে যেমন ডলারের বিকল্প তৈরিতে আগ্রহী, তেমনি তারা সবাই সোনার বড় ক্রেতা। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (পিপলস ব্যাংক অব চায়না) টানা সপ্তম মাসে সোনার মজুত বাড়িয়েছে। মে মাসে তাদের রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩ দশমিক ২৮৫ ট্রিলিয়ন ৩ লাখ ২৮ হাজার কোটি ডলারের সমান।

অথচ এ সময় সোনার দাম কম ছিল না, বরং চলতি বছর সোনার দাম অনেকটাই বেড়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, উচ্চ দাম সত্ত্বেও চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সোনা কেনা অব্যাহত রেখেছে, তা থেকেই বোঝা যায় ডলারনির্ভরতা কমাতে বেইজিং কতটা তাড়াহুড়া করছে। এর আরেকটি প্রতিফলন দেখা যায় চীনের মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের কেনা প্রবণতা হ্রাস পাওয়া দেখে। ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে চীনের হাতে ছিল ৭৮৪ বিলিয়ন বা ৭৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের মার্কিন ঋণপত্র, এপ্রিলের শেষে তা কমে দাঁড়ায় ৭৫৭ বিলিয়ন বা ৭৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে। অর্থাৎ দুই মাসে কমেছে প্রায় ২৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার।

ডব্লিউজিসির সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে ৪৭ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বড় ও ছোট দুই ধরনের খনি থেকে সোনা সংগ্রহ করে থাকে। বড় খনিগুলো থেকে তাদের সোনা কেনার পরিমাণ ৩৭ শতাংশ আর ছোট খনিগুলো থেকে ১৬ শতাংশ; বাকিটা বাজার থেকে। তবে দেশভেদে এ সংখ্যায় সামান্য অদলবদল দেখা যায় বলে জানিয়েছে ডব্লিউজিসি।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম সর্বকালীন উচ্চতায় ওঠে। ওই সময় সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ ডলারে ওঠে। আজ এ প্রতিবেদন রেখার সময় সোনার দাম ছিল ৩ হাজার ২৫০ ডলার। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনার কেনা বন্ধ না করলে এর দাম আবার বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন আর্থিক বিশ্লেষকেরা।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনার প্রবণতা বাড়ছে বলে জানা গিয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.