
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একই সময়ে ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ আলাদা বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তিন ছাত্রসংগঠনের স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদ এবং দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে এসব বিক্ষোভ–মিছিল করে ছাত্রসংগঠনগুলো।
আজ বুধবার প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে টিএসসিতে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিবিরের নেতা–কর্মীরা। গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে এ মিছিল করেন তাঁরা।
একই সময়ে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং কক্সবাজারে জামায়াতে ইসলামীর এক নেতার হামলায় স্থানীয় বিএনপি নেতা রহিম উদ্দিন সিকদার নিহত হওয়ার অভিযোগে ক্যাম্পাসে মশালমিছিল করে ছাত্রদল। সন্ধ্যার পর টিএসসি থেকে মশালমিছিল বের হয়। মিছিলটি টিএসসি, ভিসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে ডাস চত্বরের সামনে এসে শেষ হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে বিএনপি নেতা হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
সন্ধ্যার পরে একই সময় গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় টিএসসির পায়রা চত্বরে স্লোগান দেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতারা। পরে টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে শিবিরের সমাবেশের পাশ দিয়ে ভিসি চত্বরের দিকে যান তাঁরা।

ছাত্রদলের বিক্ষোভ–সমাবেশ
মশালমিছিলে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ইন্টেরিমের এ কোন নীতি’, ‘দিল্লি গেছে স্বৈরাচার, পিন্ডি যাবে রাজাকার’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘রহিম হত্যার বিচার চাই, করতে হবে করতে হবে’, ‘আমার ভাই মরল কেন, জামায়াত-শিবির জবাব দে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মশালমিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস। তিনি বলেন, ‘পরশু দিন কক্সবাজারে ইউনিয়ন জামায়াতের এক ঘাতক বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রহিম উদ্দিন সিকদারকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যার সর্বোচ্চ বিচার দাবি করছি।’
গণেশ চন্দ্র রায় আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর ছাত্র–জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর যে সরকারকে ছাত্র-জনতা বিশ্বাস করেছিল, সেই সরকার আজ হত্যাকাণ্ড রোধে ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সংস্কার তো দূরের কথা, বরং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘আজ ১৬ জুলাই, একটি ঐতিহাসিক দিন। গত বছরের এই দিনে রংপুরের শহীদ আবু সাঈদ ও চট্টগ্রামের ওয়াসিম আকরাম তাঁদের রক্ত দিয়ে যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, তা ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলেছিল এবং স্বৈরাচার পতনের পথ তৈরি করেছিল। অথচ আজ ঠিক এই দিনে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঁড়িয়ে গণ–অভ্যুত্থানের সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।’

শিবিরের বিক্ষোভ সমাবেশ
বিক্ষোভ মিছিলে শিবিরের নেতা–কর্মীরা ‘বাঁশের লাঠি তৈরি করো, গোপালগঞ্জ স্বাধীন করো’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’সহ নানা স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ মিছিল–পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘হাসিনা এবং তাঁর দোসরদের গোপালগঞ্জে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এই স্বাধীন বাংলাদেশে হাসিনা এবং তাঁর দোসরদের কোনো জায়গা হবে না।’ ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ বাংলাদেশের যে প্রান্তে আছে, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তিনি।
ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, ‘সারা দেশে যখন আওয়ামী লীগের ৩০০ এমপি পালিয়ে যায়, গোপালগঞ্জের গুটি কয়েকের লাফালাফি দেখে আমাদের মাঝেমধ্যে হাসি পায়। আবার দুঃখ হয়, সরকারের এই ব্যর্থতা দেখে।’