জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন-এনসিপিকে হুঁশিয়ারি স্বেচ্ছাসেবক দলের

0
21
রাজধানীতে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল। ১৫ জুলাই, নয়াপল্টন

সারা দেশে প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার প্রতিবাদে ছাত্রদলের পর এবার রাজধানীসহ সারা দেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল। এই কর্মসূচি থেকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সতর্ক করে বলা হয়, দেশের স্বার্থে, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলো ধৈর্য ধরে আছে। তবে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে। এদিকে বৃহস্পতিবার একই বিষয় সামনে রেখে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করবে যুবদল।

মঙ্গলবার বেলা তিনটায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি শুরু হয় বিকেল পাঁচটার দিকে। এর আগে বিকেল চারটা থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছোট ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ করে বক্তব্য দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা। তবে বৃষ্টির মধ্যে বেলা তিনটার আগেই অনেক নেতা-কর্মী নয়াপল্টনে জড়ো হন।

মিছিল–পূর্ববর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, ‘পুরান ঢাকার ঘটনায় যে ভিডিও করেছে, সে কেন এটি নিবৃত্ত করতে গেল না। তাকে কেন আঘাত করা হলো না। এটি নিছক দুর্ঘটনা নয়, এটি বিএনপির বিরুদ্ধে সাজানো–গোছানো চক্রান্ত ছাড়া কিছু নয়।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দিকে আঙুল তুলছে জামায়াতে ইসলামী। এ দেশ কি ভুলে গেছে, হানাদার বাহিনীকে আপনারা মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি চিনিয়ে দিয়েছেন। বিএনপির দিকে আঙুল তোলার আগে নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখুন।’

এনসিপির উদ্দেশে হাবিবুন নবী খান সোহেল বলেন, ‘দেশের স্বার্থে, ঐক্যের স্বার্থে অনেক কিছু সহ্য করছি। কিন্তু আমরাও মানুষ। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙবেন না। যদি ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়, তাহলে জাহান্নাম পর্যন্ত ধাওয়া করব আপনাদের।’

ইসলামী আন্দোলনের উদ্দেশে হাবিবুন নবী খান বলেন, ‘হুজুরের নামে কিছু বললে তাঁর মুরিদেরা আবার মনে কষ্ট পায়। হুজুরকে শুধু এটুকু বলব, ‘কলা খাইবা, গাছ লাগাইয়া খাও। পরের গাছের পানে কেন টিপটিপাইয়া চাও।’

সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল, বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করার জন্য এবং তাঁর সঙ্গে আরেকটি স্বীকৃত ভারতের দালাল, সেই দালালেরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। নতুন করে তারেক রহমানকে বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।

জিলানী বলেন, ‘আপনারা ভয় পেয়েছেন, কারণ তারেক রহমান যদি একবার বাংলাদেশের মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় বসতে পারে, তাহলে আপনাদের বেল (গুরুত্ব) নেই। সে কারণে তারেক রহমানকে টার্গেট করছেন। শেখ হাসিনা এ কাজে ব্যর্থ হয়েছে। আপনারাও অতি শিগগির ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবেন।’

কেউ যাতে দলের মধ্যে ঢুকে অপকর্ম করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও দলটির মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ ফরিদ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি ফখরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমুখ।

এরপর নয়াপল্টন থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, মৌচাক, মগবাজার, বাংলামোটর হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিলে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা ‘জামায়াত-শিবিরের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘স্বৈরাচার আর রাজাকার, মিলেমিশে একাকার’, ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘দিল্লি গেছে স্বৈরাচার, পিন্ডি যাবে রাজাকার’, ‘দালালি আর করিস না, পিঠের চামড়া রাখব না’, ‘শহীদ জিয়ার বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই’, ‘মব–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, আওয়াজ তোলো একসাথে’, ‘জামায়াত-শিবির–রাজাকার, জুলাই করছে ছারখার’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অবরোধের কারণে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১৫ মিনিট পর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা মোড় ছেড়ে গেলে যান চলাচল শুরু হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.