লাল চাঁদ হত্যাকে নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নের অজুহাত করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল

0
20
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে, ছবি: বিএনপির ফেসবুক পেজ

রাজধানীর মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হত্যার ঘটনা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এই মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তিনি জানান, লাল চাঁদ হত্যার ঘটনার অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধানে বিএনপির পক্ষ থেকে ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করার জন্য বিশেষ কোনো মহলের প্ররোচনায় এই ধরনের ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।

গত বুধবার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে লাল চাঁদকে হত্যা করে একদল লোক। এ ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। পাঁচ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছে বিএনপি। লাল চাঁদ হত্যার ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ছে মানুষ। চাঁদাবাজি, খুন-সন্ত্রাস বন্ধের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল রোববারও বিক্ষোভ হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ চিরুনি অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, পরিকল্পিতভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য এই হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অসংখ্য মানুষ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছাকাছি অবস্থান থাকা সত্ত্বেও কোনো প্রতিরোধ না হওয়াটা ঘটনা সম্পর্কে জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।

পূর্বপরিকল্পিতভাবে ৯ জুলাইয়ের ঘটনা ১১ জুলাই জুমার নামাজের পর ‘প্রাইম টাইমে’ ইন্টারনেটে ছড়ানো হয় বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আইডি ও পেজ থেকে আগে থেকেই তৈরি করে রাখা ফটো কার্ডগুলো অনলাইনে ছড়ানো শুরু হয়। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অনলাইনে ভুয়া তথ্য প্রচারের ক্যাম্পেইন শুরুর আগে থেকেই অপপ্রচারসামগ্রী তৈরি করে রাখা হয়েছিল।

অপরাজনীতি প্রতিহত করার ক্ষেত্রে সরকারের উদাসীনতার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে দায়িত্বশীল সব রাজনৈতিক দল সচেতন হবে বলে তাঁরা আশা করেন। রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ বাধাগ্রস্ত হলে তার দায় সংশ্লিষ্টদের বহন করতে হবে।

অপরাধীর জন্য কোনো অনুকম্পা ও পক্ষ অবলম্বনের সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় পদ থেকে অপসারণের দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপকে স্বাগত না জানিয়ে পরিকল্পিতভাবে বিএনপি ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চরিত্র হনন করা হচ্ছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

বিএনপি সরকার পরিচালনার দায়িত্বে না থাকা সত্ত্বেও দলটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে আবার ফ্যাসিবাদের যুগে ফেরাচ্ছে কি না—এমন প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল।

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য প্রদানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘দেশে সুস্থধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার গণ-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে পরিকল্পিত অপপ্রচার, অশ্লীল স্লোগানের মাধ্যমে আবার ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনিই শোনা যাচ্ছে।’

খুলনায় যুবদল নেতাকে হত্যার ঘটনায় সবার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর সমমানের ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, মাত্র গুটিকয়েক সন্ত্রাসী দ্বারা প্রকাশ্যে এমন হত্যাকাণ্ড মাত্র এক বছর আগে সংগঠিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীতে পুনরায় আইনের শাসন ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলে বিবেচিত হতেই পারে।

ব্যক্তির অপরাধের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, হত্যার দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুত কার্যকর করার বিষয়ে বিএনপির দলীয় অবস্থান সুদৃঢ় ও অপরিবর্তিত।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.