গোসল সকালে নাকি রাতে বেশি উপকারী?

0
14
গোসল

গোসল করার সময় নির্বাচন অনেকটাই ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। তবে বিজ্ঞান বলছে, কখন গোসল করছেন, সেটি আপনার ঘুম, মন এবং ত্বকের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের শিক্ষক শাহাব হাঘায়েঘ ছিলেন একসময় নিদ্রাহীন। মেলাটোনিনসহ নানা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর, তিনি তার গোসলের সময় পরিবর্তন করেন। সকাল নয়, গোসল শুরু করেন রাতে। এরপর ঘুমে পরিবর্তন আসতে থাকে।

ঘুমের জন্য রাতের গোসল

রাতে সঠিক সময় ও তাপমাত্রায় গোসল করলে ঘুম ভালো হয় বলে জানান হাঘায়েঘ। তার গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের আগে উষ্ণ পানি শরীরকে ঠাণ্ডা হতে সাহায্য করে। এই ঠাণ্ডা হওয়াই আমাদের ঘুমের প্রস্তুতি তৈরি করে।

আমাদের শরীরের অন্তর্গত ২৪ ঘণ্টার চক্র, যাকে সারকেডিয়ান রিদম বলা হয়, সেটির সঙ্গে মিল রেখে রাতে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। যারা ঘরে থাকেন, তাদের সারাক্ষণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে। এতে ঘুমের জন্য দরকারি ঠান্ডা পরিবেশের অভাব হয়।

এই পরিস্থিতিতে উষ্ণ পানি দিয়ে রাতের গোসল কার্যকর হতে পারে। উষ্ণ পানি শরীরকে গরম পরিবেশের সংকেত দেয়, ফলে শরীর তার ভেতরের তাপ চামড়ার মাধ্যমে বের করে দেয়। এতে শরীর শীতল হয়, ঘুমও সহজ হয়।

ঘুমের আগে ১০ মিনিটের একটি গোসল যথেষ্ট। তবে ঘুমানোর ১ থেকে ২ ঘণ্টা আগে গোসল করাই সবচেয়ে ভালো। না হলে শরীর ঠাণ্ডা হওয়ার আগেই বিছানায় গেলে ঘুমে সমস্যা হতে পারে।

সৃজনশীলতার জন্য রাতের গোসল উপকারী

রাতের গোসল মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন মস্তিষ্ক চাপমুক্ত থাকে, তখন সৃজনশীল চিন্তা সহজে আসে। দিনের শেষে যখন মন ক্লান্ত ও ধীর গতির, তখন হঠাৎ করে ভালো কোনো ধারণাও আসতে পারে। অনেকেই বলেন, তারা স্নানের সময় চমৎকার ধারণা পান।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক থেকেও রাতের গোসল ভালো

বস্টনের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ড. রানেলা হিরশ জানান, রাতের গোসল শরীর থেকে ধুলা, ঘাম, জীবাণু ও দূষণ অপসারণে সহায়ক। এগুলো বিছানায় গেলে ত্বকে সমস্যা হতে পারে। ত্বক সারারাত রিপেয়ার করে, তাই পরিষ্কার ত্বকে ঘুমালে উপকার বেশি।

সকালে গোসল: জাগ্রত হওয়ার জন্য উপকারী

তবে সকালে গোসলেরও কিছু সুবিধা আছে। ঘুমের সময় আমাদের শরীর থেকে কোটি কোটি মৃত কোষ ঝরে পড়ে। সকালে সেগুলো ধুয়ে ফেলা ভালো।

মনোবিজ্ঞানী শেলবি হ্যারিস বলেন, সকালের ঠাণ্ডা পানির গোসল শরীরকে সজাগ করে তোলে। ল্যাভেন্ডার বা রোজমেরির মতো সুগন্ধি ব্যবহার আরও বেশি সতেজতা আনে।

আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে গোসলের পর মানুষ আরও চনমনে বোধ করে এবং মেজাজ ভালো থাকে।

পেশা ও জীবনধারার ওপরেও নির্ভর করে

যারা কাজের জন্য বাইরে যান, তাদের জন্য দিনের শেষে গোসল বেশি উপযুক্ত। আবার অফিসগামী অনেকে সকালে গোসল করেন যাতে নিজের ভেতরে চনমনে ভাবটা থাকে। এতে চুল ঠিক থাকে এবং শরীর থেকেও সুগন্ধ আসে।

উপসংহার: কোনটা ভালো?

আপনার উদ্দেশ্য কী, তার ওপর নির্ভর করে কখন গোসল করবেন। যদি ঘুম ভালো না হয়, তবে রাতে উষ্ণ পানিতে গোসলের চেষ্টা করুন। আর সকালে ক্লান্ত লাগে? তবে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করুন।

ঘুম, সৃজনশীলতা, ত্বকের যত্ন ও কার্যকারিতা—সব মিলিয়ে গোসলের সময় বেছে নেওয়াটাও হতে পারে স্বাস্থ্যবান জীবনের অংশ।

(টাইম ম্যাগাজিন অবলম্বনে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.