বরিশালে তিন দিনের টানা বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত, জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ

0
21
ভারী বর্ষণের কারণে বরিশাল শহরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। বুধবার শহরের নবগ্রাম রোডে

বরিশালে তিন দিনের টানা বর্ষণে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে নগরের বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। সড়কে হাঁটুপানি জমে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। ভোগান্তির কথা ভেবে নগরের বাসিন্দারা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবীরা। জলাবদ্ধতার কারণে অনেক বিদ্যালয়ে বুধবার ছুটি ঘোষণা করা হয়।

বরিশাল আবহাওয়া বিভাগের তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ১৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আরও কয়েক দিন এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।

টানা বর্ষণের কারণে বরিশাল নগরের মেজর এম এ জলিল সড়ক (নবগ্রাম রোড), জীবনানন্দ দাশ সড়ক (বগুড়া রোড), করিম কুটির, ব্রাউন কম্পাউন্ডসহ বেশ কয়েকটি সড়ক ও অলিগলিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, নগরের মেজর এম এ জলিল সড়কের বটতলা থেকে চৌমাথা পর্যন্ত পুরো সড়কে হাঁটুপানি। জীবনানন্দ দাশ সড়কের সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের এলাকা, অক্সফোর্ড মিশন এলাকা, মুনশির গ্যারেজ এলাকায় জলাবব্ধতার কারণে দুর্ভোগে আছেন বাসিন্দারা। তিন দিন ধরে টানা বর্ষণের কারণে বরিশাল অঞ্চলজুড়েই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করায় জনজীবন বিপর্যস্ত। সাধারণ মানুষ তেমন একটা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো ফাঁকা।

বুধবার দুপুরে নগরের বাংলাবাজার এলাকায় রিকশা নিয়ে সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন আলমগীর হোসেন নামে একজন রিকশাচালক। ভোর থেকে টানা বৃষ্টিতে ভিজে একাকার এই চালক বললেন, ‘বেইন্নাহালে রাস্তায় নামছি, এহন বাজে একটা। মাত্র ৮০ টাহা কামাই অইছে। ৩০০ টাহা মালিকরে জমা (ভাড়া) দিতে হইবো। হ্যারপর বাজারসদাই। চাউল, বাজারসদাই তো দূরের কথা, মোনে অয় না আইজ জমা টাহা ওঠবে। তিন দিন ধইর্যাই এইরহম অবস্থা।’

টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েছে মানুষ। বুধবার দুপুরে বরিশাল নগরের মেজর এম জলিল সড়কে
টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতায় বিপাকে পড়েছে মানুষ। বুধবার দুপুরে বরিশাল নগরের মেজর এম জলিল সড়কে

নগরের বটতলা এলাকার সড়কের পাশে একটি চায়ের দোকানে চা পান করছিলেন আবুল হোসেন নামের একজন নির্মাণশ্রমিক। তিনি বলেন, ‘তিন দিন কাম-কাউজ সব বন্ধ। ধারদেনা কইর্যা চলতে আছি। জানি না আরও কয় দিন এমন অবস্থা থাকপে। মোগো তো মরণদশা এহন।’

বরিশাল আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বুধবার বিকেলে বলেন, এমন টানা বর্ষণ আগামীকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর বৃষ্টি কমে আসতে পারে। তবে একেবারে কমতে আরও বেশ কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।

আউশখেত-আমন নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

লাগাতার বৃষ্টিতে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের চলতি আউশ মৌসুমে আউশ ধানের খেত ও আমনের বীজতলা নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এতে কৃষকেরা শঙ্কার মধ্যে আছেন। বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ছোট কৃষ্ণকাঠি গ্রামের কৃষক আমজেদ সিকদার (৬০) জানান, তাঁরা এরই মধ্যে আমন আবাদ করেছেন। আরও কিছু জমি আবাদের জন্য বীজতলা করেছেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে নদীর জোয়ার আর বর্ষণের কারণে খেত ও বীজতলা কোমরসমান পানিতে নিমজ্জিত। পানি নামার কোনো ব্যবস্থা নেই। কারণ, নদীগুলোও কানায় কানায় ভরা। এমন অবস্থা আরও কয়েক দিন স্থায়ী হলে বীজতলা ও খেত সব নষ্ট হয়ে যাবে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শঙ্কায় আছেন বরগুনার আমতলী উপজেলার কৃষকেরা। এই উপজেলায় জলকপাটগুলো থেকে পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে আউশখেত ও আমনের বীজতলায়। এতে দুচিন্তায় আছেন উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার কৃষক। এতে আউশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাসেল।

আমতলী কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চলতি বছর ৮ হাজার ৫৮৮ হেক্টর আউশ ধান রোপণ এবং ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। আউশের ধান বের হওয়ার সময় হয়েছে। কিন্তু খেত পানির নিচে তলিয়ে থাকায় আউশ ধান বের হতে পারছে না। এতে আউশের খেত ও আমনের বীজতলা পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলার কুকুয়া, চাওড়া, আঠারোগাছিয়া ও গুলিশাখালী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, আউশের খেত ও আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। মাঠঘাট পানিতে থই থই করছে। হলদিয়া ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া গ্রামের কৃষক শিবলী শরীফ বলেন, পানিতে আউশের খেত ও আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। আউশ ধান বের হওয়ার সময় এখন, কিন্তু পানিতে তলিয়ে থাকায় বের হতে পারছে না।

আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাসেল বলেন, লাগাতার বৃষ্টির পানি আউশের খেতের জন্য বেশ ক্ষতিকর হবে। দ্রুত পানি নেমে গেলে সমস্যা হবে না। তিনি আরও বলেন, আমনের বীজতলা তেমন করা হয়নি, যা করা হয়েছে তার ক্ষতি হলেও কৃষকেরা পুষিয়ে নিতে পারবেন। কিন্তু আউশ ধানের ক্ষতি পোষানো কঠিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.