মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সন্দেহে আটক তিনজন ফেরত এসেছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে: আসিফ নজরুল

0
21
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল

মালয়েশিয়ায় জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে তিনজন ইতিমধ্যে দেশে ফেরত এসেছেন জানিয়ে প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরপরও এই অভিযোগে আটক হয়ে যাঁরা ফেরত আসবেন, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

শুক্রবার রাতে এ কথাগুলো বলেছেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এর আগে শুক্রবার কুয়ালালামপুরে সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জঙ্গি–সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করার কথা জানান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে শ্রমিকদের মধ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর মতাদর্শ প্রচার এবং তহবিল সংগ্রহ করে, বাংলাদেশি শ্রমিকদের এমন একটি চক্র ভেঙে দিয়েছে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ। আটক বাংলাদেশি শ্রমিকেরা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীর কাছে অর্থ পাঠাতেন।

গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে মালয়েশিয়ার পুলিশের মহাপরিদর্শক খালিদ ইসমাইল বলেন, চক্রটি অন্যান্য বাংলাদেশি শ্রমিককে নিশানা করে সদস্য সংগ্রহ করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে উগ্র ও চরমপন্থী মতাদর্শ ছড়িয়ে দিত। আটক ৩৬ বাংলাদেশি শ্রমিকের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ১৫ জনকে দেশে (বাংলাদেশে) ফেরত পাঠানো হবে। বাকি ১৬ জন এখনো পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এই চক্রে ১০০ থেকে ১৫০ জনের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে। যাঁদের সংশ্লিষ্টতার মাত্রা কম, তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। আর যাঁরা গভীরভাবে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জঙ্গি-সংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান চলবে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল রাতে বলেন, ‘মালয়েশিয়া আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। কয়েক লক্ষ বাঙালি ওখানে কাজ করছে। এই ধরনের ঘটনা যখন ঘটে, কয়েকজনের বিরুদ্ধে এ রকম অভিযোগ আসে জঙ্গিবাদে জড়ানোর, এটা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর। আমাদের এবং মালয়েশিয়ার দুই দেশের জন্যই এটা উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়।’

বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনজন অলরেডি (ইতিমধ্যে ফেরত এসেছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা যখনই বাংলাদেশে ফেরত আসবে, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তারা জড়িত থাকলে, উপযুক্ত প্রমাণ নিজেরা পেলে বা মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ থেকে পেলে আমরা অবশ্যই তাদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাব। আর আমরা বদ্ধপরিকর, এই ব্যাপারটা নিয়ে আমরা মালয়েশিয়ার উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করছি, একসাথে কাজ করব। মালয়েশিয়ার মাটিতে হোক, বাংলাদেশের মাটিতে হোক, কোনো রকম জঙ্গিবাদ আমরা প্রশ্রয় দেব না। এই ব্যাপারে আমরা কঠোর অবস্থান নিব।’

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ২০১৬ সালে আইএস–সংশ্লিষ্ট এক হামলার পর জঙ্গি সন্দেহে শত শত ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তবে গত কয়েক বছরে অঞ্চলজুড়ে নিরাপত্তা অভিযান জোরদার করার পর থেকে গ্রেপ্তারের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

কারখানা, চাষাবাদ ও নির্মাণ খাতে শ্রমিকের চাহিদা পূরণে মালয়েশিয়া বিদেশি জনশক্তির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। প্রতিবছর হাজার হাজার বাংলাদেশি নাগরিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে দেশটিতে পাড়ি জমান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.