সিটিকে বিদায় করে রোনালদোর দাবিকে সত্য প্রমাণ করল আল হিলাল

0
23
ম্যানচেস্টার সিটির জালে গোলের পর সতীর্থকে নিয়ে আল হিলাল ডিফেন্ডার কালিদু কুলিবালির উল্লাস, এএফপি

সৌদি প্রো লিগ সত্যিই বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ লিগের কাতারে উঠে এসেছে কি না, তা আরও গভীর গবেষণার বিষয়। তারকা, আয়-ব্যয়, জনপ্রিয়তা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা—এসব বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তারপর হয়তো সিদ্ধান্তে আসতে হবে। সেটা না হয় ছেড়ে দেওয়া হলো সময়ের হাতে। আপাতত ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দাবিকেই তো সত্য প্রমাণ করল আল হিলাল!

পরশু প্রো লিগের দল আল নাসরের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হ্যান্ডলে রোনালদোর সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে আল নাসর তারকা দাবি করেন, ‘আমার বিশ্বাস, এরই মধ্যে আমরা শীর্ষ পাঁচে (বিশ্বের সেরা পাঁচ লিগ) আছি।’ নিজের দাবির পক্ষে রোনালদো জোর দিয়ে বলেন, ‘নিজের কথায় আমার শতভাগ আস্থা আছে। যাঁরা এই লিগে খেলেন, তাঁরা আমার কথার অর্থ বুঝতে পারবেন।’

প্রো লিগেরই দল আল হিলাল যেন রোনালদোর মুখের কথা মাটিতেও পড়তে দিল না! বাংলাদেশ সময় আজ সকালে ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় ম্যানচেস্টার সিটিকে ৪-৩ গোলে হারিয়েছে আল হিলাল। এটুকু পড়ে কিংবা জেনে কিছু বিষয় ভাবার আছে। তবে সেই ভাবনা ভাবার আগে এটাও জেনে রাখুন, ম্যান সিটির হারের পর স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’র একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম, ‘কে এখন রোনালদোর কাছে ক্ষমা চাইবে?’ মানে, রোনালদোর অমন মন্তব্যের পর নিশ্চয়ই তাঁর সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু আল হিলাল তাঁর দাবির সমর্থনে বড় একটি ম্যাচ জেতায় সেসব সমালোচনা এখন তো গিলতে হবে!

ভাবনার বিষয় হলো, সিটি শুধু ক্লাব বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন নয়, বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ ১০ মৌসুমের মধ্যে সিটি ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন। এর মধ্যে টানা চারবার শিরোপা জয়ের নজিরও আছে একবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের। গত মৌসুমটা তাদের ভালো না কাটলেও সব মিলিয়ে সিটি এই মুহূর্তেও বিশ্বের সেরা তিনটি দলের একটি। ট্রান্সফারমার্কেট অনুযায়ী, যাদের স্কোয়াডের মোট দাম প্রায় ৭৯ কোটি ২৫ লাখ পাউন্ড (প্রায় ১৩ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা)। আল হিলালের স্কোয়াড মূল্য ১৫ কোটি ৯৪ লাখ ইউরো (প্রায় ২ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা)।

এশিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগ কিংবা সৌদি লিগ রেকর্ড সংখ্যকবার জিতলেও শুধু দামে নয়, ধারে-ভারে কোনো দিক থেকেই সিটির সঙ্গে গত মৌসুমে প্রো লিগে দ্বিতীয় হওয়া আল হিলালের তুলনা চলে না। কিন্তু ফুটবল কখনো কখনো খুব শক্তিশালী দলকেও মাটিতে নামিয়ে আনে। অরল্যান্ডোয় শুধু প্রথমার্ধে ১-০ গোলে পিছিয়ে ছিল আল হিলাল। এরপর অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত সিটির সঙ্গে টক্কর দিয়েই চার গোল করে জয় তুলে নেয় সৌদি ক্লাবটি।

এই হারের কারণ হিসেবে আল হিলালের প্রতি আক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারাকে দুষেছেন সিটির অধিনায়ক ও মিডফিল্ডার বের্নার্দো সিলভা, ‘আমরা তিন গোল করেছি। পাঁচ-ছয় গোলও করতে পারতাম। আসল ব্যাপারটা হলো বল হারানোর পর সবকিছু নিয়ন্ত্রণে রাখা। তাদের দৌড়াতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু তারা অনেকবারই দৌড়েছে এবং যখন আমরা এভাবে প্রতিপক্ষকে দৌড়াতে দিই, তখনই প্রচুর ভুগতে হয়, যেটা আজ ঘটেছে।’

হারের পর আল হিলালের খেলোয়াড়ের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা
হারের পর আল হিলালের খেলোয়াড়ের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা, এএফপি

সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা অবশ্য খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে অসন্তুষ্ট নন। ক্লাব বিশ্বকাপে নিজের প্রথম হারের পর বলেছেন, ‘আমার মতে, দল ভালোই করেছে। কিন্তু আমরা ফিরে যাচ্ছি। এখন বিশ্রাম নিয়ে মনটাকে চাঙা করে আগামী মৌসুমে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা ভাবতে হবে। আমরা ভালো কিছু সুযোগ তৈরি করেছি। তবে (আল হিলাল গোলকিপার) বুনু দারুণ কিছু সেভ (১০টি সেভ) করেছে। আমি এমন অনেক ভালো কিছুই দেখলাম, যা আগে কখনো দেখিনি।’

আল হিলালের শক্তি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নিজেদের দুর্ভাগ্যকে টানলেন গার্দিওলা, ‘আমরা জানতাম দলটা ভালো। বেশির ভাগই ইউরোপে অনেক বছর খেলেছে। যেসব সুযোগ তৈরি করেছি তাতে আজ আমরা সত্যিই ভালো খেলেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ফলটা নিজেদের পক্ষে আনতে পারিনি।’

জয়ের পর আল হিলাল কোচ সিমোন ইনজাগির কণ্ঠে ঝরেছে উচ্ছ্বাস, ‘ম্যানচেস্টার সিটিকে হারাতে আমরা জানতাম অবিশ্বাস্য কিছু করতে হবে। ছেলেরা আজ সেটাই করেছে। আমাদের অসাধারণ খেলতে হতো কারণ দলটার নাম ম্যানচেস্টার সিটি। ম্যাচটি জিততে আমাদের অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্টে উঠতে হতো এবং আমরা সেটাই করেছি।’

সেই এভারেস্টে ওঠার আগে ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলো পর্যন্ত প্রাইজমানি হিসেবে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার আয় করেছিল আল হিলাল। কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠায় আরও ১ কোটি ৩৭ লাখ ডলার প্রাইজমানি যোগ হলো তাতে। সিটিকে ফিরতে হলো ৫ কোটি ডলার প্রাইজমানি নিয়ে।

তবে আল হিলালের কিছু খেলোয়াড়ের কাছে আপাতত প্রাইজমানির অংকের চেয়ে আনন্দের পরিমাণটাই বেশি। জোড়া গোল করা ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্কোস লিওনার্দো যেমন জয়ের পর বলেন, ‘গত দুই মাসে খুব কঠিন সময় কেটেছে। আমার মা ৭০ দিন ধরে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। এখন তিনি ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। দুটি গোল করে তাঁর কথা ভেবেছি। মা ম্যাচটি দেখতে পেরেছেন।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.