৬০০ মিলিয়ন ভিউ হওয়া সিরিজটি এবার কোন রেকর্ড গড়বে

0
20
‘স্কুইড গেম ৩’-এর দৃশ্য। ছবি: নেটফ্লিক্স

গল্পটি এক দশক আগেই লেখা ছিল। কেউ বিশেষ পাত্তা দেয়নি। ‘প্যারাসাইট’ অস্কার জেতার পর হঠাৎ কোরীয় কনটেন্ট নিয়ে মেতে ওঠে তাবৎ ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। গল্পটিও কলকে পায়। এরপরের গল্প তো আপনার জানা, ২০২১ সালে মুক্তির পর স্ট্রিমিংয়ের সব রেকর্ড ভেঙেচুরে দেয় ‘স্কুইড গেম’। গত বছর মুক্তি পাওয়া দ্বিতীয় মৌসুম নিয়েও কম চর্চা হয়নি। সিরিজটির তৃতীয় ও শেষ মৌসুম মুক্তি পাচ্ছে আজ শুক্রবার।

ঋণজর্জরিত সিয়ং গি-হুনকে ঘিরে এগিয়েছে সিরিজের গল্প। মোটা অঙ্কের নগদ পুরস্কারের লোভে যিনি ভয়ংকর শিশুতোষ খেলায় অংশ নেন। বিষয়গত দিক থেকে ‘প্যারাসাইট’ ও ‘স্কুইড গেম’-এর মিল আছে। আর এই সাদৃশ্য নেহাত কাকতালীয়ও নয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় ধনী ও দরিদ্রদের মধ্যে যে পাহাড়সমান অর্থনৈতিক বৈষম্য, পরিচালকদের বারবার প্রেরণা জুগিয়েছে, সেই জ্বলন্ত বাস্তব। তবে এই সোশ্যাল স্যাটায়ারের কেন্দ্রে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার শিশুদের কয়েকটি খেলা। ঋণে জর্জরিত বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বিরাট অঙ্কের অর্থ-পুরস্কার জেতার লোভে অংশ নেয় একটি রহস্যজনক খেলায়, যেখানে প্রতি পদে মৃত্যুর হাতছানি। খেলাগুলোর বেশ কয়েকটি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের দেশেই ছোটবেলায় খেলা হয়। তাই এই শো যতটা দক্ষিণ কোরীয়, ততটাই বিশ্বজনীন। বিনোদনের আড়ালে সিরিজটি দিয়ে পুঁজিবাদকে একহাত নিয়েছেন নির্মাতা।

রেকর্ড ভিউ
দুই কিস্তি মিলিয়ে ‘স্কুইড গেম’–এর ভিউ ৬০ কোটি! এর মধ্যে ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম মৌসুমই এখনো নেটফ্লিক্সের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় শো। মুক্তির মাত্র তিন দিনের মাথায়ই এটি অ-ইংরেজিভাষী শোয়ের টপ টেন তালিকায় ঢুকে পড়ে। নেটফ্লিক্সে এখন পর্যন্ত এটি তৃতীয় সর্ববৃহৎ মৌসুম। তৃতীয় কিস্তি যুক্ত হলে এই সংখ্যা আরও ফুলেফেঁপে উঠবে সন্দেহ নেই।

‘স্কুইড গেম ৩’-এর দৃশ্য। ছবি: নেটফ্লিক্স
‘স্কুইড গেম ৩’-এর দৃশ্য। ছবি: নেটফ্লিক্স

যত পুরস্কার
পুরস্কারপ্রাপ্তির দিক থেকেও পিছিয়ে নেই সিরিজটি। প্রথম মৌসুম ১৪টি এমি মনোনয়ন ও ৬টি জয় করে ইতিহাস গড়ে। অ-ইংরেজিভাষী কোনো সিরিজ প্রথম এত পুরস্কার পায়। গোল্ডেন গ্লোবে তিনটি মনোনয়ন পেয়ে একটিতে পুরস্কার জেতে প্রথম মৌসুম। দ্বিতীয় মৌসুমও গোল্ডেন গ্লোবে সেরা ড্রামা সিরিজ বিভাগে মনোনীত হয়।
এ ছাড়া ‘স্কুইড গেম’ ছিল প্রথম অ–ইংরেজিভাষী সিরিজ, যা একাধিক সেগ অ্যাওয়ার্ডসে জেতে একাধিক পুরস্কার। সিরিজটি অ্যাপ স্টোরের চার্টেও বাজিমাত করেছে। মাল্টিপ্লেয়ার গেম ‘স্কুইড গেম: আনলিশড’ বিশ্বের ১০৭টি দেশে বিনা মূল্যে পাওয়া অ্যাকশন গেমের তালিকায় ১ নম্বরে ছিল।

পর্দা ছাড়িয়ে
পর্দা ছাড়িয়ে বাস্তব জগতে পৌঁছে গেছে ‘স্কুইড গেম’। নেটফ্লিক্স ২৫টির বেশি দেশে ও ছয়টি মহাদেশে ভক্তদের জন্য নানা ধরনের ইভেন্টের আয়োজন করেছে। ১৩টি দেশে এসব ইভেন্টে সরাসরি অংশ নিয়েছেন ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ, যাঁদের মধ্যে ৪৭ হাজার জন বিভিন্ন খেলা ও চ্যালেঞ্জে অংশ নেন। বিপণন কার্যক্রমে বিশ্বজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে ১৮ হাজারের বেশি ‘পিঙ্ক গার্ড’।

‘স্কুইড গেম ৩’-এর দৃশ্য। ছবি: নেটফ্লিক্স
‘স্কুইড গেম ৩’-এর দৃশ্য। ছবি: নেটফ্লিক্স

নিউইয়র্ক, লন্ডন, মাদ্রিদ, সিডনি ও সিউলে এরই মধ্যে চালু হয়েছে ‘স্কুইড গেম: দ্য এক্সপেরিয়েন্স’। প্রতিটি শহরে উদ্বোধনেই টিকিট শেষ। গ্রীষ্ম শেষ হওয়ার আগেই এতে অংশ নেবে ৫ লাখের বেশি দর্শক—এমনটাই ধারণা নেটফ্লিক্সের।
তৃতীয় মৌসুম উপলক্ষে নিউইয়র্ক ছাড়াও মেক্সিকো, মালয়েশিয়া, জার্মানি, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পপআপ ইভেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে। সিরিজের আইকনিক গেমগুলোয় অংশ নিতে পারবেন ভক্তরা। চূড়ান্ত খেলা অনুষ্ঠিত হবে সিউলে, যেখানে থাকবে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, যোগ দেবেন ভক্ত ও ইনফ্লুয়েন্সাররা।

অম্লমধুর এক অভিজ্ঞতা
সিরিজটির নির্মাতা হোয়াং ডং-হিউক বিবিসিকে জানান, সিরিজটি তৈরি করতে গিয়ে মানসিক চাপে তাঁর দাঁত পর্যন্ত পড়ে যায়। শেষ পর্ব নিয়ে তিনি বলেন, ‘শেষটা ছিল অম্লমধুর এক অভিজ্ঞতা।’ প্রথমে পাঁচ মৌসুম পর্যন্ত এগোনোর পরিকল্পনা থাকলেও লিখতে লিখতেই একটা স্বাভাবিক ছাঁট পাওয়া যায় বলে জানান ডং-হিউক। আলোচিত সিরিজটি শেষ হওয়ায় মন খারাপ হলেও একদিক থেকে স্বস্তিতে আছেন নির্মাতা। তাঁর ভাষ্যে, ‘কারণ অবশেষে স্কুইড গেমের জগৎ থেকে বের হতে পারছি। আবার ভালো সব স্মৃতির সঙ্গে বিদায় নেওয়াটাও কষ্টের…তাই একটা বিষণ্নতাও আছে।’

সিরিজটিতে অভিনয় করেছেন লি জুং-জেও, লি বাইয়ুং-হুন, উই হা-জুন প্রমুখ। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা লি জং-জেও বলেন, ‘শেষ হচ্ছা, এটার সঙ্গে এখনো পুরোপুরি মানিয়ে নিতে পারিনি। দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখার পর হয়তো “স্কুইড গেম” আর সিয়ং গি-হুনকে বিদায় বলার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারব।’
তথ্যসূত্র: ভ্যারাইটি, বিবিসি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.