নির্বাচনী আচরণবিধি: পোস্টার বন্ধ ও প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে দলগুলোর মতভেদ

0
22
নির্বাচন কমিশন

পোস্টারের মাধ্যমে ভোটারদের দোরগোড়ায় পৌঁছান প্রার্থীরা। জানান দেয়া হয় প্রতীক আর প্রার্থিতার। প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে সবশেষ নির্বাচনে পোস্টার ছিল প্রচারের বড় হাতিয়ার।

তবে পরিবেশ ও দূষণ বিবেচনায় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন থেকে সনাতনী এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের আচরণবিধি পরিবর্তনের উদ্যোগ। এ সংক্রান্ত খসড়ায় পোস্টারের পরিবর্তে প্রচারণা চালাতে ফেস্টুন, ব্যানার ও বিলবোর্ডের ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে ভিন্নমত আছে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর।

নেতারা বলছেন, এতে ছোট ও নতুন দলগুলো সমান সুযোগ হারাবে। তবে সব দলই নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধে ইসিকে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, পোস্টার বন্ধ করার বিষয়টি ইতিবাচক। বিকল্প হিসেবে উনারা প্রস্তাব করেছেন বিলবোর্ড, ব্যানার ইত্যাদি। এটা ঠিক আছে। পরিবেশের সাথে সহায়ক হবে এবং অনেক রকমের জটিলতা নিরসন হবে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেছেন, নির্বাচনকে উৎসবের মতো ভাবে মানুষ। সেটার একটা অলঙ্কার হিসেবে পোস্টারকে ভাবে। সেটির বিকল্প হিসেবে যদি ভিন্ন কোনও কিছু নিয়ে আসে, সেটা আলোচনার ভিত্তিতে হলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।

এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বললেন, বিলবোর্ডের প্রচারণাটা একটু ব্যয়সাপেক্ষ। যাদের আর্থিক সক্ষমতা খুব বেশি, পূর্বের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে যারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে, তারা দেখছে যে এ সুবিধাটা বেশি ব্যবহার করতে পারবেন।

কমিশনের প্রস্তাবিত খসড়ায় আচরণবিধি মানতে দলীয় অঙ্গীকারনামা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে গুরুতর অপরাধে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান। তবে এর বাইরে রাজনৈতিক দলগুলোরও কিছু প্রস্তাব আছে।

প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে— নির্বাচনী প্রচারে প্রার্থীদের পোস্টার বাদ দেয়া, দলীয় অঙ্গীকারনামা করতে হবে, একই প্ল্যাটফর্মে সব প্রার্থীর ইশতেহার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করা যাবে, তবে বিদেশি বিনিয়োগ নয়, আর্মসের নতুন সংজ্ঞা, টি-শার্ট ও জ্যাকেটে প্রচার করা যাবে, প্রার্থিতা বাতিলের বিধান, জরিমানা তিন গুণ বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা, ব্যানার, ফেস্টুন, প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীর নতুন সংজ্ঞা, সার্কিট হাউজ ব্যবহারে বিধি-নিষেধ এবং মাইকে শব্দের সবোর্চ্চসীমা ৬০ ডেসিবেল।

হামিদুর রহমান আজদ বলেন, নির্বাচনী ব্যয়নির্বাহের ক্ষেত্রে সরকার ব্যয়ভার বহন করলে বড় দল ও ছোট দল এগুলোর পার্থক্য আর থাকছে না।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা পোস্টার বন্ধ করে আরও কিছু খুলে দিলাম, যেটার খরচ আরও বেশি। তাহলে তো স্বাভাবিকভাবেই টাকারই দৌরাত্ম বাড়বে। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত পুরো ব্যয়ভার নির্বাচন কমিশন সবার জন্য সমভাবে গ্রহণ না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই টাকার খেলা চলতে থাকবে।

আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ধরা যাক, জামালপুরে একটি দল বিধিনিষেধ অমান্য করে প্রচারণা করছে। ইসিকে বারবার জানানো হয়েছে কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নিলেন না। তাহলে সেই আচার-আচরণ নিয়ম বিধিনিষেধ দিয়ে আসলে কোনও কিছুই হবে না।

সবশেষ ২০০৮ সালে আচরণবিধিতে পরিবর্তন এনেছিল ইসি। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব দলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো সংশোধনী আনা উচিত বলে মনে করে রাজনৈতিক দলগুলো।

সালাউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বর্তমান অবস্থার সাথে মিলিয়ে নতুন আকাঙ্ক্ষার সাথে মিলিয়ে আচরণবিধি প্রণয়ন করাটা সঠিক আছে। স্টেকহোল্ডারদের সাথে যদি মতবিনিময় করে, এটা একটা জায়গায় আসা যাবে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বললেন, প্রস্তাবনাগুলো চূড়ান্ত করার আগে উচিত হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময় করা। তাদের পরামর্শগুলো বিবেচনার মধ্যে নেয়া।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ সংশোধনের পর আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.