তুষারকাণ্ডে নাম জড়ানোয় যা বললেন এনসিপি নেত্রী

0
10
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা জাবীন। ছবি: সংগৃহীত

দলের এক নেত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে। এনিয়ে একাধিক অডিও ও স্ক্রিনশটও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এরপর থেকে তুষারের ফোনকলের অপরপ্রান্তে থাকা নারী দাবি করে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা জাবীনের নাম ও ছবিসহ অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিষয়টি নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দিয়েছেন তাজনুভা।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, শুধু এটুকু বলি, যার অডিও আমার নামে বলে ফটোকার্ড, ভিডিও কনটেন্ট বানিয়ে ভরায় ফেলছেন, আমি বা আমরা খুব সহজে তার নাম প্রকাশ করে আমার বিরুদ্ধে হওয়া এই জঘন্য মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করতে পারি। আমরা তার নাম পাল্টা প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকছি।

তাজনুভা জাবীন আরও লিখেছেন, রাজনীতিতে আসার পর দ্বিতীয়বারের মতো খুব পরিকল্পনামাফিক এই ভয়াবহ সাইবার আক্রমণ চালানো হচ্ছে আমাকে ঘিরে। আমি শুধু বুঝি, আমার কথা বা লেখা গুরুত্বপূর্ণ না হলে এত মানুষ আমাকে নিচে নামানোর এত আপ্রাণ চেষ্টা করত না। এসবের উত্তর ‘সময়’ অবশ্যই দেবে। আল্লাহ ভরসা।

এর আগে, একই দিন দুপুরে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন সারোয়ার তুষার। পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—

‘আমাকে যারা খেয়াল করেন, আমার ওপর ভরসা করেন, প্রত্যাশা রাখেন: আমি ভুলত্রুটির ঊর্ধে না। মানুষ হিসেবে আমার আরও ডেভেলপ করার স্কোপ আছে। যদি কোনো ভুল করি, অবশ্যই আপনারা আমাকে তা জানাবেন, আমি শুধরে নিতে প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি কোনো অপরাধ করিনি। এ ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল ও ব্যাশিং আমি ডিজার্ভ করি না। কোনো মানুষই করেন না। এই স্মিয়ার ক্যাম্পেইন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার দলের কেন্দ্রীয় একজন যুগ্ম আহ্বায়ক নারী সহকর্মীকে যেভাবে অপমান করা হচ্ছে, তার সঙ্গে আমার ছবি জুড়ে দিয়ে, জঘন্য কুৎসিত কথাবার্তা লিখে, ভিডিও বানিয়ে আমার আর তার নামে প্রচার করা হচ্ছে। যারা এই কুৎসিত কাজগুলো করছেন, দয়া করে করবেন না। রাজনৈতিক বিরোধিতা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে রাখার আহ্বান জানাই। আমার দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের নারী সহকর্মীরা এর আগেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা ও হ্যারাজমেন্টের শিকার হয়েছেন। এখন আমার সাথে তাদের জড়িয়ে এই নোংরামিগুলো করবেন না। তারা সম্মানিত ও সম্ভ্রান্ত নারী। রাজনীতির বাইরেও তাদের ব্যক্তিগত জীবন আছে৷ তাদের জীবন বিষিয়ে তুলবেন না। আমার চরিত্রহনন করতে গিয়ে তাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবেন না। এটা আমার অনুরোধ। তারা কোনো দোষ করেননি। দুই ব্যক্তির ব্যক্তিগত কথোপকথন বিনা অনুমতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়া জঘন্য কাজ। আমি ভুলের ঊর্ধ্বে না। কিন্তু আমার তিন মাস আগের ব্যক্তিগত কথোপকথন কাঁটছাঁট করে পরিপ্রেক্ষিহীনভাবে অনলাইনে ছেড়ে দিয়ে আমাকে অপদস্থ করার মধ্যে কোনো গৌরব নাই।’

‘এর আগেও আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ডিপার্টমেন্টের কালচারাল প্রোগ্রামের অভিনয়ের ছবিকে বিকৃত করে আমার বিরুদ্ধে স্মিয়ার ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে। আমি আমার জবান স্রেফ আমার রাজনৈতিক বিরোধীদের রাজনৈতিক সমালোচনায় খরচ করি। ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্রহনন ও কুৎসা রটনা করি না। একিলিস ও হেকটরের যুদ্ধে একিলিস হেকটরকে বধ করেন ঠিকই; কিন্তু একজন বীর যোদ্ধার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে কুণ্ঠা করেন না। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চব্বিশের ৭ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত আমি লাগাতারভাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে রাজপথে অংশ নিয়েছি। ৫ আগস্টের পর আমি বিএনপির ব্যাপারে বেশ সমালোচনামুখর হয়েছি আমার রাজনৈতিক অবস্থানের জায়গা থেকে। সমালোচনা ও ভিন্নমত বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রাণভোমরা।’

‘পরিশেষে, সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের অভিজ্ঞতা বীভৎস। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল কিছু শুনতে চায় না; তার কাছে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত থাকে। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু ও মিত্ররা আমার ওপর ভরসা করেন। আমার প্রতি তাদের প্রত্যাশাও অনেক। আমার কোনো সাময়িক বিচ্যুতির কারণে তারা বিব্রত হয়ে থাকলে তাদের প্রতি আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। আমি জানি আমার জড়ানোর মাত্রা কতটুকু, আর কতটুকু আমি অর্গানাইজড ভার্চুয়াল মবের শিকার। আমার নামে ভুয়া স্ক্রিনশট ও কনভার্সেশন ভাইরাল করা হয়েছে। ওই কনভার্সেশনগুলো আমার না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দল স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, আমি লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দেব।’

‘প্রসঙ্গত, আমি কাউকে কোনো ধরনের হুমকি-ধমকি দিইনি। দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতেই আমি নেই। এ ব্যাপারে আমার নামে ফেসবুকে যা প্রচার করা হচ্ছে তা সর্বৈব মিথ্যা। আমি এমনকি আমার এই পোস্টেও সংশ্লিষ্ট অপরপক্ষের পরিচয় প্রকাশ করছি না। যা যা বলার আছে, তা আমি দলের কাছেই লিখিতভাবে বলব। সোশ্যাল মিডিয়ার সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, আমার দলের কেন্দ্রীয় কোনো নারী বা দলের বাইরের অন্য কোনো নারীকে ঘিরে কুৎসা রটনা করবেন না।
ভবিষ্যতে আমি আরও পরিশীলিত হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখব। আমাকে যারা সমালোচনা ও বিরোধিতা করেন, তাদের প্রতিও আমার আহ্বান থাকবে আপনারা রাজনৈতিক বিরোধিতাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও চরিত্রহননে পর্যবসিত করবেন না। বাংলাদেশপন্থার জয় হোক।’

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওঠা নৈতিক স্খলনের অভিযোগের বিষয়ে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে তাকে অভিযোগের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার আগপর্যন্ত সারোয়ার তুষারকে এনসিপির সব সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.