স্টারলিংক নিয়ে হোয়াইট হাউস থেকে এলো ভয়ংকর তথ্য

0
6
স্টারলিংক নিয়ে হোয়াইট হাউস থেকে এলো ভয়ংকর তথ্য।

মার্কিন ধনকুব ও টেসলা ও স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্কের উপগ্রহ-ভিত্তিক ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক স্টারলিংকে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে বলে হোয়াইট হাউজের কয়েকজন বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আমেরিকার জনপ্রিয় সংবাদপত্র দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।

এমন সময় এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে যখন গত কয়েকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার বন্ধু ধনকুবের ইলন মাস্কের সম্পর্কের ফটল নিয়ে বেশ সরগরম বিশ্ব।

শনিবার (৭ জুন) এনবিসির সাক্ষাৎকারে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্কের সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষ। তিনি আর সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চান না।

যদিও সম্প্রতি ট্রাম্পের কর ও ব্যয় বিলকে ‘জঘন্য’ বলে কটাক্ষ করেন মাস্ক। জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি ভীষণ হতাশ। কারণ, এখানে উপস্থিত অন্য যে কারও চেয়ে তিনি এ বিলের ভেতরের খুঁটিনাটি সম্পর্কে ভালো জানতেন। হঠাৎই এটি নিয়ে তার সমস্যা শুরু হয়েছে।

তবে ট্রাম্পের এ দাবিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মাস্ক। ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মাস্ক একাধিক পোস্ট দিয়েছেন। এসব পোস্টে ট্রাম্পকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেও ছাড়েননি। প্রমাণ না দিলেও মাস্ক দাবি করেছেন, ট্রাম্প ‘এপস্টেইন ফাইল’–এ আছেন।

এরই মধ্যে, মার্কিন সরকারের ওপর ভর করে ইলন মাস্কের যেসব ব্যবসাপাতি চলছে সেগুলো নিয়ে তাকে হুমকিও দিয়েছেন সাবেক বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সুতরাং তাদের সম্পর্কে যে বড়সড় ফাটল ধরেছে তা বুঝতে আর কারো বাকি নেই। এখন ট্রাম্প যদি তার সরকারকে মাস্কের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন, তাহলে এই টেক বিলিয়নেয়ারের শান্তির ঘুম যে নষ্ট হবে তা বলাই যায়।

এদিকে, দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট হাউসে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার সময় এর সাথে সম্পৃক্ত এমন তিনজনের বক্তব্যের ভিত্তিতে খবরটি প্রকাশ করেছেন তারা। স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় ওই তিন ব্যক্তি নিজেদের পরিচয় প্রকাশ হয়নি।

তবে ওই তিন জনের বক্তব্য, গত ফেব্রুয়ারিতে মাস্কের ডিওজিই প্রতিনিধিরা হোয়াইট হাউজের পাশের আইজেনহাওয়ার এক্সিকিউটিভ অফিস ভবনের ছাদে একটি টার্মিনাল বসান। কিন্তু ঘটনাটি হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিদের আগে থেকে জানানো হয়নি।

তাদের ভাষ্য, এ ধরনের সংযোগের মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য বাইরে চলে যাওয়া কিংবা হ্যাকারদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর সক্ষমতা হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নেই।

হোয়াইট হাউসের ওই তিন ব্যক্তির তথ্যানুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গণে মোবাইল ফোনে ‘স্টারলিংক গেস্ট’ নামে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক দেখাতো, যেখানে শুধু পাসওয়ার্ডই চাইতো। ব্যবহারকারীর নাম বা দ্বিতীয় স্তরের যাচাই পদ্ধতি ছিল না। এই ওয়াইফাই নেটওয়ার্কটি গত সপ্তাহেও হোয়াইট হাউসে পাওয়া গেছে।

ওই তিন কর্মকর্তার একজন বলেন, কর্মীরা যেসব কম্পিউটারে কাজ করেন, সেগুলো কঠোর নিরাপত্তা প্রোগ্রাম লক করা থাকে। বাইরের জগতের সঙ্গে তাদের যে কোনো যোগাযোগও নজরদারিতে রাখা হয়। কিন্তু স্টারলিংকে কিছুই লাগে না। এটা আপনাকে এমনভাবে তথ্য পাঠাতে দেয়, যেখানে কোনো রেকর্ড বা ট্র্যাকিংয়ের সুযোগ থাকে না।

তিনি আরও বলেন, নেটওয়ার্কে হোয়াইট হাউসের আইটি সিস্টেমের জোরালো নিয়ন্ত্রণ থাকে। সব সময় পুরোপুরি ভিপিএন টানেলে থাকতে হয়। আপনি ভিপিএনে না থাকলে হোয়াইট হাউসের ডিভাইসগুলো বাইরের ইন্টারনেট সংযোগে কাজ করবে না।

ওই তিনজনের আরেকজন বলেন, স্টারলিংকের সংযোগ হোয়াইট হাউসের ডিভাইসগুলোকে বাইরের নেটওয়ার্কে যেতে বাধা দেয় না। এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাইপাস করতে সহায়তা করে।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য চেয়েছিল। কিন্তু তারা বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসে পাঠিয়ে দেয়। সিক্রেট সার্ভিস জানিয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের মন্তব্য করার এখতিয়ার নেই।

সিক্রেট সার্ভিসের মুখপাত্র অ্যান্টনি গুগলিয়েলমি বলেন, আমরা জানতাম ডিওজিই হোয়াইট হাউস কমপ্লেক্সে ইন্টারনেট সংযোগ উন্নত করতে চাচ্ছে এবং আমরা এটিকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনা করিনি।

এ ছাড়া, এ বিষয়ে স্টারলিংকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয় ওয়াশিংটন পোস্টের পক্ষ থেকে। তবে স্টারলিংকের তরফ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাননি।

যদিও ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই বলে আসছে যে, তাদের স্যাটেলাইট সংযোগগুলো হ্যাক করা তুলনামূলক কঠিন।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.