চট্টগ্রাম নগরের একটি কারখানা থেকে ছয় দিন আগে ২০ হাজার ৩০০টি সন্দেহজনক পোশাক (ইউনিফর্ম) জব্দ করা হয়েছে। ১৭ মে রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে পোশাকগুলো জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে এ ঘটনায় করা মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, ইউনিফর্মগুলো পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ)। দুই কোটি টাকার চুক্তিতে ইউনিফর্মগুলো প্রস্তুতের ফরমাশ নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় পোশাক কারখানাটির মালিকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিষয়টি আজ রোববার জানাজানি হয়। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন সাহেদুল ইসলাম, গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। পুলিশ জানিয়েছে, সাহেদুল ইসলাম কারখানার মালিক। অন্য দুজন পোশাকগুলো তৈরির ফরমাশ এনেছিলেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে ১৮ মে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার তিনজন ছাড়াও রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের মংহলাসিন মারমা (৩৭) নামের এক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
মামলা করলেও নগর পুলিশ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হয়নি। আজ দুপুরে প্রথমে যোগাযোগ করা হয় বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি ঘটনার বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। পরে মামলার বাদী নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কিছু বলেননি। এরপর বিকেল পাঁচটার দিকে নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনিও ধরেননি।

তবে পুলিশের অভিযানের দিন ঘটনাস্থলে থাকা জব্দ তালিকার এক নম্বর সাক্ষী রিংভো অ্যাপারেলস উৎপাদন ব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান আজ বলেন, ‘কাপড়গুলো যে অবৈধ, তা আমরা জানতাম না। পুলিশ আসার পর জানতে পারি।’
পুলিশের করা মামলায় বলা হয়েছে, গত মার্চে পোশাকগুলো কারখানাটিতে ফরমাশ দিয়েছিলেন গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দার। তাঁরা মংহলাসিন মারমা ওরফে মং নামে একজনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা চুক্তিতে পোশাকগুলো তৈরির ফরমাশ নেন। চলতি মাসে পোশাকগুলো সরবরাহের কথা ছিল।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, নিষিদ্ধ সংগঠন কেএনএফের সদস্যরা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র অবস্থান করে ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়, হত্যা, অপহরণ, গুমসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে। গ্রেপ্তার ও অজ্ঞাতপরিচয় আসামিরা বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি জননিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করতে অবৈধভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।
ফেসবুকে পেজ খুলে দুই থেকে তিন বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। পাহাড়ের দুই জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে একটি আলাদা রাজ্য গঠনের ঘোষণাও দেয় তারা। কয়েকটি সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি এবং হত্যার অভিযোগ উঠতে থাকে শুরু থেকেই। একপর্যায়ে ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংঘাত হয় কয়েকবার।
পাহাড়ের দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতিও করে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। বান্দরবানের দুই উপজেলায় ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ব্যাংকের তিন শাখায় ডাকাতির ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।