বিশ্বে প্রথম শুরু হচ্ছে গনোরিয়ার টিকাদান

0
13
গনোরিয়ার টিকাদান

সংক্রামক যৌনরোগ গনোরিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রথম টিকাদান কর্মসূচি শুরু হতে যাচ্ছে ইংল্যান্ডে। এই উদ্যোগ সেক্সুয়ালি ট্রান্সিমিটেড ডিজিজ বা যৌনবাহিত সংক্রমণ (এসটিআই) বৃদ্ধির মোকাবিলায় এক বড় পদক্ষেপ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে এখনই সবাইকে এই টিকা দেওয়া হবে না। প্রাথমিকভাবে টিকার মূল লক্ষ্য সমকামী ও উভকামী পুরুষ, যাদের একাধিক যৌনসঙ্গী থাকা অথবা যৌনরোগে ভোগার (এসটিআই) ইতিহাস রয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ইংল্যান্ডে গনোরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৮৫ হাজারের বেশি, যা ১৯১৮ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ। গনোরিয়ার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার কিছু কিছু ধরন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

নতুন এই টিকাটি ৪-সিএমএনবি নামে পরিচিত, যা বর্তমানে ‘মেনিঞ্জোকক্কাল-বি’ রোগের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। এটি গুরুতর মেনিঞ্জোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যা মেনিনজাইটিস ও সেপসিস ঘটাতে পারে। শিশুদের রুটিন টিকাদান কর্মসূচিতে এটি ৮ সপ্তাহ, ১৬ সপ্তাহ এবং এক বছর বয়সে দেওয়া হয়।

ব্রিটেনে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) প্রাথমিক পরিচর্যা ও কমিউনিটি পরিষেবা বিষয়ক জাতীয় পরিচালক ডা. আমান্ডা ডয়েল বলেন, গনোরিয়ার জন্য রুটিন টিকাদান কর্মসূচির সূচনা যৌন স্বাস্থ্যের জন্য এক বিশাল অগ্রগতি। এটি ব্যক্তিদের রক্ষা করতে, সংক্রমণের বিস্তার রোধ করতে এবং অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ধরনের বিস্তারের ক্রমবর্ধমান হার কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যারা এই টিকা নেওয়ার যোগ্য তাদের চিহ্নিত করে খুব শিগগির যোগাযোগ করা হবে। ১ আগস্ট থেকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রিত যৌন স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোর মাধ্যমে এই টিকা দেবে। একই সঙ্গে রোগীদের মাঙ্কিপক্স, হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস এবং হেপাটাইটিস এ ও বি-এর টিকাও দেওয়া হবে। ডা. ডয়েল আরও বলেন, এনএইচএস দলগুলো দেশজুড়ে এই কর্মসূচির পরিকল্পনা ও দ্রুত বাস্তবায়নে কাজ করছে।

গনোরিয়া যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় সর্বাধিক সাধারণ ব্যাকটেরিয়া ঘটিত যৌনবাহিত সংক্রমণ। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে সবুজ বা হলুদ স্রাব, প্রস্রাবের সময় ব্যথা এবং মলদ্বারে ব্যথা ও অস্বস্তি। নারীদের ক্ষেত্রে, তলপেটে ব্যথা বা মাসিকের মধ্যে রক্তপাত হতে পারে। তবে, অনেক মানুষের কোনো লক্ষণই থাকে না।

এই টিকায় নেইসেরিয়া মেনিনজাইটিডিস (যে ব্যাকটেরিয়া মেনিঞ্জোকক্কাল রোগের কারণ) থেকে বের করে আনা প্রোটিন থাকে। এই ব্যাকটেরিয়াটি নেইসেরিয়া গনোরিয়ার (যে ব্যাকটেরিয়া গনোরিয়ার কারণ) সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জিনগতভাবে সম্পর্কিত। ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন সংক্রান্ত জয়েন্ট কমিটির (জেসিভিআই) গবেষণায় দেখা গেছে,৪-সিএমএনবি টিকা গনোরিয়ার বিরুদ্ধে ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৪২ শতাংশ কার্যকর। তাই এই টিকা সংক্রমণের ঝুঁকি কমালেও, সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করবে না। তবে, জেসিভিআই বলেছে—টিকাদান উপকারী হবে। কারণ, পূর্ববর্তী গনোরিয়া সংক্রমণ ভবিষ্যতের সংক্রমণের বিরুদ্ধে সামান্য সুরক্ষা দেয় বলে মনে করা হয়।

ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যাশলে ডালটন জনগণকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু একে অপরকে সুরক্ষিত রাখতেই নয়, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলায় এটি জরুরি।

তিনি আরও বলেন, যারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে তাদের লক্ষ্য করে আমরা এই অপ্রীতিকর রোগের সংক্রমণের হার কমাতে পারি, যা চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে এবং আগামী কয়েক বছরে হাজার হাজার ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারি।

ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা টেরেন্স হিগিন্স ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী রিচার্ড অ্যাঞ্জেল এই টিকাকে ‘গেমচেঞ্জার’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এটি একাই ৪০ শতাংশ নতুন গনোরিয়ার ঘটনা কমাতে পারে।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.