আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট একটা সাধারণ নির্বাচন করা: প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ

0
8
সমাবেশের বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠ , ১৭ মে

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আপনি কি চান নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক? এ দেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক? হুঁশিয়ার করে দিতে চাই প্রফেসর ড. ইউনূস সাহেব, আপনি বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব, সম্মানিতজন। আপনি সম্মানের সঙ্গে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন ডিসেম্বরের মধ্যে। যে কথা আপনি আমাদের দিয়েছিলেন। সংস্কার এবং বিচার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেটি চালু থাকবে, যারাই সরকারে আসুক। অনন্তকাল ধরে আপনি বিচার এবং সংস্কারের বাহানা দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কণ্টকাকীর্ণ করবেন না।’

আজ শনিবার খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী সমাবেশে যোগ দেন।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আপনার নেতৃত্বে গণ–অভ্যুত্থানের পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। কিন্তু মনে করবেন না রোজ কেয়ামত পর্যন্ত আপনাদের আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইব। এখন মানুষ আপনার সরকারকে বলছে এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির দুজন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তাঁরা উপদেষ্টা, আবার এনসিপি সংগঠন করেন। অফিশিয়ালি করে না, কিন্তু সবাই সবকিছু জানে। ওপেন সিক্রেট। যদি আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান, তাহলে সেই এনসিপি মার্কা সেই দুজনকে পদত্যাগ করতে বলেন। যদি পদত্যাগ না করেন, আপনি বিদায় করুন।’

খুলনা-বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ে তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিএনপির নেতা–কর্মীরা জমায়েত হন। খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠ , ১৭ মে

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে আপনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। আপনার কী সেই আক্কেল জ্ঞান নাই। একজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী নিরাপত্তাসংক্রান্ত রিপোর্ট প্রদান করবে কীভাবে ভাবলেন। তিনি রোহিঙ্গা করিডরের নামে মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চান। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আপনি কথা বলেননি। এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ–আলোচনা করেননি। অত্যন্ত অ্যারোগেন্টলি আপনার সেই উপদেষ্টা বলছেন তাতে নাকি কিছু যায় আসে না। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন। হয় তিনি নিজে পদত্যাগ করবে, না হলে আপনি তাঁকে বিদায় করবেন। এ দেশের নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো জাতীয় দায়িত্ব বিদেশি কোনো নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না। এই নাগরিক ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য। আমরা তা হতে দেব না।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা দেখেছিলাম বাংলাদেশের একটি খুনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি এক দিনে হয় নাই। এই বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডে বিশ্বস্বীকৃত, জাতিসংঘ স্বীকৃত বিশ্ব খুনি শেখ হাসিনা স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সমস্ত গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার হরণ করেছে। জাতিসংঘের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ১ হাজার ৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে মারণাস্ত্রের আঘাতে। শতকরা ৬৬টি বুলেট মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সামরিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এ দেশের মানুষের ওপর হেলিকপ্টারের গানশিপ থেকে গুলি করা হয়েছে। সেই গণহত্যা চালানোর পর এই শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের কোনো অনুশোচনা নাই। তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে নাই, তারা দুঃখ প্রকাশ করে নাই। উল্টো দিল্লিতে বসে এ দেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের অপরাধী হিসেবে তকমা দিচ্ছে। এমন একটি প্রেক্ষাপটে আমরা বাংলাদেশ ও গণমানুষের পক্ষে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারের দাবি করেছিলাম। আমরা দাবি করেছিলাম ওই রাজনৈতিক দলের বিচার করা হোক। সংশ্লিষ্ট আইনের পরিবর্তন আনা হোক। সরকার করেছে, তবে অনেক পানি ঘোলা করে।’

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাস জন্মলগ্ন থেকেই একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। এই দেশের সাংবিধানিকভাবে গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস। বাকশাল প্রণয়নের মধ্য দিয়ে নিজেদের রাজনীতিকে হত্যা করার ইতিহাস। এ দেশে আওয়ামী লীগের ইতিহাস রক্ষী বাহিনী সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ৩০ হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে হত্যার ইতিহাস। এমনিভাবে আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালে গণহত্যার মধ্য দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক মৃত্যু ডেকে এনেছে। আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের ঢাকার মাটিতে। দাফন হয়েছে দিল্লিতে। আওয়ামী লীগ বিভিন্নভাবে এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের জন্য সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে। এই অত্যাচার-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক মৃত্যু ডেকে এনেছে। রাজনৈতিকভাবে তারা তাদের নিজেদের অপসারণ নিজেরাই করেছে এবং রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটিয়েছে এবং এ দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই দেশে বন্দর, করিডর—সবকিছু নাকি ইউনূস সরকারের অধিকারের মধ্যে পড়ে। বিদেশে আপনি কী কন্ট্রাক্ট করে এসেছেন জানি না। আপনি অবলীলাক্রমে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর, নদীবন্দর, করিডর সব বিদেশিদের কাছেন হস্তান্তর করবেন—কী চুক্তি করে এসেছেন? কী এখতিয়ার আছে আপনার? কী ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছেন। আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট বাংলাদেশে একটা সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। সুন্দর, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। আমরা বলছিলাম, যথেষ্ট হয়েছে, নির্বাচনমুখী যেসব জরুরি সংস্কার করা দরকার, সেসব জরুরি সংস্কার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে ডিসেম্বরের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে হবে। আপনি আশ্বস্ত করেছিলেন আবার আপনি সরে গেলেন।’

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম (মুন্না)। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম (নয়ন)। সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.