রত্নগর্ভা সম্মাননা পেলেন ৩৫ মা

0
67
রত্নগর্ভা মা সম্মাননা গ্রহণ করছেন এক মা। রোববার ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে

নাটকে আমাকে প্রায়ই ‘মা’ ডাকতে হয়। তখন সঙ্গে সঙ্গে আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। পৃথিবীর প্রতিটি মা-ই তো রত্নগর্ভা। যেকোনো একজন মাকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনার সন্তান কী? তিনি বলবেন, সে তো আমার রত্ন। বিশ্ব মা দিবসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে এসব কথা বলেন বরেণ্য অভিনেতা আবুল হায়াত। অনুষ্ঠানে রত্নগর্ভা ৩৫ মাকে সম্মাননা দেয় আজাদ প্রোডাক্টস।

আজ রোববার ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘রত্নগর্ভা মা ২০২৩-২৪’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২০০৩ সাল থেকে আজাদ প্রোডাক্টস এই সম্মাননা দিয়ে আসছে। অনুষ্ঠান শুরু হয় জেমসের বিখ্যাত ‘মা’ গানটি দিয়ে।

এ বছর সাধারণ বিভাগে ২৫ জন আর বিশেষ বিভাগে ১০ জন মা সম্মাননা পেয়েছেন। সাধারণ বিভাগে রত্নগর্ভা সম্মাননা পাওয়া মায়েরা হলেন মারতুজা নুসরাত, ফরিদা বেগম, রাশিদা বেগম, নাসিমা মান্নান চৌধুরী, বিবি মরিয়ম, রোকেয়া খানম, পিয়ারা বেগম, আফরোজা পারুল, রোকসানা আক্তার, হাসিনা আক্তার, বেগম সালেহা করিম, ফাতিমা নার্গিস, আনজুমান আরা বেগম, সালমা আলম, জোবেদা খানম, রাজিয়া বেগম, মোসাম্মৎ মাহমুদা বেগম, কিশোয়ার জাহান, ফাতেমা বেগম, সুরাইয়া চৌধুরী, রাবেয়া পারভীন, আদরিনী সরকার, হাছিনা আক্তার, মনোয়ারা বেগম ও হালিমা আক্তার।

বিশেষ বিভাগে সম্মাননা পেয়েছেন সাহানা সিরাজ, সাহানা আকতার চৌধুরী, মুসলিমা খানম, অলকা ঘোষ, স্মৃতি কণা বড়ুয়া, শামছুন্নাহার হোসেন, খাদিজা খন্দকার, ফরিদা বেগম, ফাতেমা আলম, সৈয়দা দিলরুবা খানম। ‘মাই ড্যাড ওয়ান্ডারফুল’ পুরস্কার পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক আরেফিন বাদল।

এবারের রত্নগর্ভা মায়েদের একজন রোকেয়া খানম। হাতিয়া দ্বীপের এই নারী উচ্চমাধ্যমিকের পর আর পড়তে পারেননি। চাকরি করায় সেখানেও দিতে হতো যথেষ্ট সময়। তবে এত ব্যস্ততার মধ্যেও সন্তানের লেখাপড়ায় কোনো ছাড় দেননি এই মা। তাঁর তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে একজন একটি বেসরকারি প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, একজন সরকারি একটি অধিদপ্তরের উপপরিচালক, একজন ব্যবসায়ী আর মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি করছেন।

রোকেয়া খানম বলেন, ‘ওরা যখন ছোট ছিল, তখন থেকেই ওদের উচ্চশিক্ষিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। হাতিয়ায় যতটুকু সম্ভব পড়িয়েছি। এরপর বাইরে পাঠিয়েছি। এখন ওরা প্রতিষ্ঠিত। ভালো লাগে যে আমরা সবাই মিলে ঢাকায় একসঙ্গে থাকি।’

মাকে নিয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের উপপরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা হাতিয়ার বাসিন্দা। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত মা যত্ন নিয়ে সবার দেখাশোনা করেছেন। এরপর যে যার মতো সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। এই পুরো যাত্রাটাই মায়ের অবদানে।’

অনুষ্ঠানে পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, ‘আমার স্ত্রী সাহানা সিরাজ আজ তাঁর সন্তানের জন্য রত্নগর্ভা মা পুরস্কার পাচ্ছেন, এটা আমার জন্য আনন্দের সংবাদ।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ের এই অস্থির পৃথিবীতে খ্যাতি অর্জন, অর্থ উপার্জনের যে প্রতিযোগিতায় সন্তানদের ধাবিত করছি, তা কখনো সভ্যতার কল্যাণ আনতে পারে না। কতটা খ্যাতিমান সন্তান তৈরি করলাম, তার চেয়ে মানবিক, সামাজিক সচেতনতাবোধ ও ন্যায়পরায়ণ সন্তানকে আমি বেশি প্রাধান্য দিই।’

রত্নগর্ভা মা সম্মাননা পাওয়া মায়েদের একাংশ। রোববার ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী মিলনায়তনে

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি নেতা ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন। তিনি বলেন, ‘২০০৩ সালে মাকে নিয়ে এখানে এসেছিলাম। তিনি সেবার পুরস্কার পেয়েছিলেন। আজ তিনি অসুস্থ। কয়েক দিন আগে তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলাম। তেমন একটা নড়াচড়া করেন না। তবে আমার হাত ধরেই আছেন, ছাড়ছেন না। ছেড়ে দিলে আবারও টেনে নিচ্ছেন। এই যে কী অসীম ভালোবাসা! যাঁদের মা নেই, তাঁরা এই সুখ থেকে বঞ্চিত।’ তিনি বলেন, ‘মা হলেন সবচেয়ে বড় শিক্ষক। আমরা যেন সব সময় মায়েদের সেবা করতে পারি, মা দিবসে সেটা আরেকবার স্মরণ করতে হবে।’

রত্নগর্ভা মায়েদের উদ্দেশে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. সবুর খান বলেন, ‘আপনারা যে উদ্দীপনা ও মনোভাব নিয়ে সন্তানদের মানুষ করার কারণে এখানে সংবর্ধিত হচ্ছেন, এ বিষয়গুলো বা বার্তাগুলো এখনকার মায়েদের জানা দরকার।’

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে আজাদ প্রোডাক্টসের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ দিনটির জন্য মায়েদের মতো আমিও অপেক্ষায় থাকি। আজ মায়েদের আনন্দ করার দিন।’ তিনি বলেন, ‘মা একজন মহান শিল্পী। তাঁর সেই শিল্পীসত্তার বাস্তব রূপ দেন সন্তানদের মধ্যে। সুসন্তান গড়ার ক্ষেত্রে তাঁরাই নিপুণ কারিগর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.