
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। দুজনেই বেশ প্রাণোচ্ছ্বল। সামনে মস্কোর রেড স্কয়ার দিয়ে কুচকাওয়াজ করে যাচ্ছেন হাজার হাজার সেনাসদস্য। প্রদর্শন করা হচ্ছে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। চিত্রটি রাশিয়ার বিজয় দিবসের। এদিন জমকালো কুচকাওয়াজের মাধ্যমে নিজেদের শক্তিমত্তা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন পুতিন।
আজ শুক্রবার (৯ মে) রাশিয়ার ৮০তম বিজয় দিবস ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের জয় উপলক্ষে দিবসটি পালন করে আসছে মস্কো। বিজয় দিবস ঘিরে ইউক্রেনে তিন দিনের যুদ্ধবিরতিও ঘোষণা করেন পুতিন। তবে কিয়েভের দাবি, এ সময় হামলা না চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েও, তা পালন করেনি রাশিয়া।
বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের সময় পুতিনের সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ছিলেন বিভিন্ন দেশের নেতারা। সুদূর ব্রাজিল থেকে উড়ে এসেছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা। এ ছাড়া ছিলেন উত্তর কোরিয়ায় সামরিক কর্মকর্তারা। এদিন দেশটির রাজধানীয় পিয়ংইয়ংয়ে রুশ দূতাবাস পরিদর্শনে যান উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন।
রেড স্কয়ারে আজকের কুচকাওয়াজে অংশ নেন রাশিয়ার ১১ হাজার ৫০০ সেনাসদস্য ও কর্মকর্তা। তাঁদের মধ্যে দেড় হাজার জন ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কুচকাওয়াজে প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করা হয় সামরিক ড্রোন। ছিল ট্যাংকসহ বিভিন্ন সাঁজোয়া যান। এ ছাড়া সামনে আনা হয় রাশিয়ার ‘ইয়ারস’ আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র। সেগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম।
কুচকাওয়াজের সময় সরাসরি ধারাভাষ্য করা হচ্ছিল। এ সময় বলা হয়, রেড স্কয়ারে ল্যানসেট, গেরান–২, অরলান–১০ ও অরলান–৩০ নামের ড্রোন প্রদর্শন করা হয়। এর মধ্যে গেরান–২ কামিকাজে বা আত্মঘাতী ড্রোন। এটি রাশিয়ায় তৈরি হলেও নকশা করেছে ইরান। ইউক্রেনের হামলা চালাতে গেরান–২ ড্রোন ব্যাপকহারে ব্যবহার করেছে মস্কো।

কুচকাওয়াজে রাশিয়ার পাশাপাশি চীনের সেনারা অংশ নিয়েছিলেন। এ সময় উত্তর কোরিয়ার সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে করমর্দন করেন পুতিন। তাঁদের রণকৌশলের প্রশংসা করেন। ইউক্রেনের হাত থেকে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল মুক্ত করতে রুশ সেনাদের পাশপাশি উত্তর কোরিয়ার সেনারাও লড়াই করেছেন বলে সম্প্রতি জানিয়েছে ক্রেমলিন।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়, গতকালের বিজয় দিবসে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলাসহ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশ, আফ্রিকা, এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার নেতাদের উপস্থিত থাকা এটিই দেখিয়েছে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মস্কোর সাবেক মিত্ররা দূরে সরে গেলেও, রাশিয়া এখনো একঘরে হয়ে যায়নি।
কুচকাওয়াজের সময় রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, নাৎসি জার্মানিকে পরাজিত করার ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকাকে খাটো করার কোনো চেষ্টা রাশিয়া কখনোই মেনে নেবে না। তবে তিনি এ কথাও স্বীকার করেন যে হিটলারকে পরাজিত করতে সোভিয়েত ইউনিয়নের পশ্চিমা মিত্রদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
বিজয় দিবস উপলক্ষে পুতিনের তিন দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয় ৮ মে। আজ শনিবার তা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দুই দিন ইউক্রেনে বড় কোনো হামলা চালায়নি মস্কো। তবে কিয়েভের দাবি, যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে তাদের ওপর হামলা হয়েছে। আর রেড স্কয়ারে কুচকাওয়াজের আগে এর সমালোচনা দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘এটি হবে নির্লজ্জতার কুচকাওয়াজ। এটিকে অন্য কোনোভাবে বর্ণনা করার উপায় নেই। এটি হবে ঘৃণা ও মিথ্যার এক প্রদর্শনী।’
রয়টার্স
মস্কো