ইন্টারনেট নাগরিক অধিকার, অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ অনুমোদন

0
18
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ মঙ্গলবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’–এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ, ছবি: পিআইডি

বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাদ দিয়ে তার পরিবর্তে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ নামে একটি আইন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। অনেক দিন ধরে আলোচনা ও খসড়া পরিবর্তনের পর আজ মঙ্গলবার ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’–এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এতে সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য বা কনটেন্ট, যেটি সহিংসতা উসকে দিতে পারে, সেটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রস্তাবিত আইনে রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’–এর এই খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’–এর খসড়ার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে সাইবার জগতে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং যৌন হয়রানিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এই নয়টি ধারা ছিল কুখ্যাত ধারা। সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৯৫ শতাংশ মামলাই এসব ধারায় হয়েছিল। এই মামলাগুলো এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। এ ছাড়া ইতিপূর্বে বিভিন্ন ধারায় যেসব মামলা করা হয়েছিল, সেগুলোও বাতিল হয়ে যাবে।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে সাইবার নিরাপত্তা আইনের যেসব বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে, তার কয়েকটি ধারা তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক প্রচারণার দণ্ড–সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার, ইত্যাদি সংক্রান্ত ধারা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, এই ধারায় অনেক সাংবাদিকও ভুক্তভোগী হয়েছেন। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, ইত্যাদির অপরাধ ও দণ্ড এবং আক্রমণাত্মক, মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন, তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ, ইত্যাদি ধারাও বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

কিছু কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, স্পিচ অফেন্স-সম্পর্কিত বা কথা বলে বা মতপ্রকাশের অপরাধের ক্ষেত্রে দুটি অপরাধ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলত কনটেন্ট প্রকাশ ও হুমকি দেওয়া। আরেকটি হলো ধর্মীয় ঘৃণা ছড়ানোর মধ্যে দিয়ে সহিংসতাকে উসকে দেওয়া। তবে ধর্মীয় ঘৃণাকে সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যাতে ভুল–বোঝাবুঝি না হয় এবং হয়রানি করতে না পারে। ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য বা যেকোনো কনটেন্ট, যেটি সহিসংতা উসকে দিতে পারে, সেটিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

স্পিচ অফেন্স-সম্পর্কিত এই দুটি ধারার ক্ষেত্রে রক্ষাকবচও রাখা হয়েছে বলে জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, এ ধরনের মামলা কারও বিরুদ্ধে হলে আমলি আদালতে যাবে এবং যাওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারক যদি দেখেন এই মামলায় কোনো সারবত্তা নেই, তাহলে তিনি প্রাক-বিচার পর্যায়েই এই মামলা বাতিল করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ চার্জশিটের (অভিযোগপত্র) জন্যও অপেক্ষা করতে হবে না। এ ছাড়া এগুলোকে কিছু ক্ষেত্রে আপসযোগ্যও রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কথা বলা বা মতপ্রকাশ–সংক্রান্ত অপরাধ বিষয়ের ক্ষেত্রে জামিনযোগ্য করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) মাধ্যমে যদি সাইবার অপরাধ করা হয়, তাহলে সেটি শাস্তিযোগ্য করা হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেনছবি: পিআইডি

সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের রাখার বিধান রয়েছে বলেন জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কনটেন্ট অপসারণের পর আদালতের অনুমতি নিতে হবে। আদালত যদি বলেন এই কনটেন্ট অপসারণ করা যাবে না, তাহলে তা পুনর্বহাল করতে হবে। যে কনটেন্ট অপসারণ করা হবে, সেটি সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে।

অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করতে বিভিন্ন পর্যায়ে পরামর্শ করার কথা বলতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ২৫ বার খসড়া পরিবর্তন করা হয়েছে। সবশেষে বড় সমালোচক সুশীল সমাজের সঙ্গে তিন ঘণ্টা বসে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজকে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ওঠে। এখন আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি যাচাইয়ের (ভেটিং) পর অধ্যাদেশ জারি হবে। তাঁরা আশা করছেন, এ সপ্তাহের মধ্যে এটি কার্যকর হবে।

সীমানা নির্ধারণ–সংক্রান্ত আইন সংশোধন

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ–সংক্রান্ত আইনে বিদ্যমান জটিলতা দূর করে সংশোধনী আনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। আসিফ নজরুল বলেন, এখন অধ্যাদেশ জারি হলে সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যে সাংবিধানিক দায়িত্ব আছে, সেটি তারা ইচ্ছা করলে শুরু করতে পারবে।

এ ছাড়া আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দেওয়ানি কার্যবিধি বা সিপিসি সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.