নারীর প্রতি সহিংসতা জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিরোধী

0
13
রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে এনসিপি। সেখানে বক্তব্য দেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। ৮ মার্চ

নারীর প্রতি সহিংসতার যে পরিস্থিতি এখন দেশে দেখা যাচ্ছে, তা জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিরোধী বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। তাঁরা বলেছেন, দেশে নাগরিক নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। এ কারণে নারীর নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে এনসিপি। ‘জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা ও সাইবার সুরক্ষার দাবিতে’ এই সমাবেশ করা হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিটি ধাপে নারীরা যে ভূমিকা দেখিয়েছেন, অভ্যুত্থানের পরে এটাকে অস্বীকার করার পাঁয়তারা চলছে বলে সমাবেশে অভিযোগ করেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। তিনি বলেন, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে স্বপ্ন তরুণেরা দেখছে, সেখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বে নারীদের উঠে আসার জন্য জায়গা করে দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু পুরো রাজনৈতিক কাঠামো ও ব্যবস্থা এর উল্টো দিকে চলছে।

সামান্তা শারমিন বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার যে পরিস্থিতি এই মুহূর্তে বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে, সেটা কোনোভাবেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বরং বিরোধী। দেশে নাগরিক নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। এ কারণেই নারীর নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানে যে ফ্যাসিস্ট কাঠামোর বিলোপের কথা বলা হয়েছিল, সেই ফ্যাসিস্ট কাঠামো এখনো বিলোপ হয়নি। এই কাঠামো বিলোপের জন্য ধারাবাহিক লড়াইয়ের প্রয়োজন আছে। নারীদের অসংযত হতে বাধ্য করবেন না।

নারী ও পুরুষ সমাজে সমান সুযোগ ও অধিকার পাওয়ার যোগ্য—এ কথা এনসিপি দলীয়ভাবে বিশ্বাস করে বলে সমাবেশে উল্লেখ করেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা এমন চূড়ান্ত রূপে চলে গেছে যে নারীর নাগরিক মর্যাদা, আত্মমর্যাদা ও সামাজিক স্বীকৃতি প্রশ্নবিদ্ধ। ধর্ষণের মতো ঘটনা এখন সমাজে দৈনন্দিন অপরাধের মতো হয়ে গেছে।

সমাবেশে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় সংগঠক শ্যামলী সুলতানা জেদনী বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে। নারীরা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে, নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, নিপীড়িত হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশকে একটা ‘অথর্ব রাষ্ট্রে’ পরিণত করছে এই দেশের আইন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে শ্যামলী সুলতানা বলেন, ‘নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতদের অতি শিগগির আইনের আওতায় আনবেন এবং তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবেন। যদি আপনারা সেটা না পারেন, তাহলে বাংলাদেশের নারীরা এই দায়িত্ব বুঝে নেবে।’

নারী দিবস পালন করার আগে নারীকে মর্যাদা দেওয়া, সম্মানের আসনে বসানো ও নারীর অধিকারগুলো সুরক্ষিত করার আহ্বান জানান মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ বস্তিবাসীর প্রতিনিধি ময়না।

‘রাষ্ট্র এক জিনিস, ধর্ম আরেক জিনিস’

শাহবাগের এই সমাবেশে অংশ নেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমও। জুলাই অভ্যুত্থানে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরেন তিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে নারী নিপীড়ন, হেনস্তা ও ধর্ষণের কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে সারজিস বলেন, শকুনদের দৃষ্টি থেকে বোনদের রক্ষা করা এখন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া নারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার করা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

সারজিস আলম বলেন, ‘একটি জিনিস স্পষ্ট করে আমাদের দলের পক্ষ থেকে বলি, রাষ্ট্র এক জিনিস, ধর্ম আরেক জিনিস। রাষ্ট্রকে সব ধর্মকে ধারণ করতে হয়। সব চিন্তাধারার মানুষকে ধারণ করতে হয়। এখানে নির্দিষ্ট একটি ধর্মের মানুষ তার বিশ্বাস, রীতিনীতি ও প্রথাগুলো চাইলেই অন্য ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। আরেকজন মানুষ যিনি কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নন, তাঁকেও চাপিয়ে দিতে পারে না।’

জনপরিসর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সারজিস। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বোনেদের এই অভ্যুত্থানে, হাসিনাবিরোধী লড়াইয়ে যেমন সামনের সারিতে পেয়েছি, আমরা আমাদের বোনদের আগামীর রাজনীতিতে নীতিনির্ধারণেও সামনের সারিতে চাই।’

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস, শিক্ষার্থী তাসমিয়া রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশের সঞ্চালক ছিলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন ও সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) দ্যুতি অরণ্য চৌধুরী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.