রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের সঞ্চালন লাইন আগামী এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার আশা করছে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি। লাইনটি চালু করার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে অন্তত দুই মাস সময় লাগতে পারে রূপপুরে। জুলাইয়ে শুরু হতে পারে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন। এরপর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হতে পারে আগামী বছর।
সংশ্লিষ্টব্যক্তিরা বলছেন, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সময় দফায় দফায় পেছাচ্ছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। এটি পিছিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয়। এখন আরও পিছিয়ে যাচ্ছে। আর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর কথা ছিল ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। এটি পিছিয়ে ২০২৫ সালে নেওয়া হয়েছিল। তবে এটি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে ২০২৭ সালে।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, গত সেপ্টেম্বরে চুল্লিপাত্রের ভেতর ‘ডামি’ জ্বালানি প্রবেশ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর পুরোটাই এখন নির্ভর করছে সঞ্চালন লাইনের ওপর। সঞ্চালন লাইন তৈরি হওয়ার দুই মাস পর পারমাণবিক জ্বালানি প্রবেশ করানো হবে। জ্বালানি প্রবেশে এক মাস সময় লাগে। এরপর কিছু কিছু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। একই সঙ্গে চলবে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এতে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে রূপপুরের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে আগামী বছর। তবে এটি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পাবনার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরমাণু শক্তি কমিশন। এ প্রকল্পের আওতায় ঠিকাদার হিসেবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত ছিল প্রকল্পের মেয়াদ। গত বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ডিসেম্বর ২০২৭ করা হয়েছে। তবে চুক্তি অনুসারে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও খরচ বাড়াতে পারবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের সূত্র বলছে, করোনা মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে কাজ ব্যাহত হয়েছে। আর্থিক লেনদেনে জটিলতা, যন্ত্রপাতি দেশে আনা, বিশেষজ্ঞদের আসায় জটিলতা, বৈদেশিক মুদ্রা ডলারসংকটে বিল পরিশোধে দেরি, সব মিলে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। এতে কাজ পিছিয়ে গেছে। এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কাজও। এমন পরিস্থিতিতে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।
রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহেদুল হাছান বলেন, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত হলে দুই মাস সময় লাগবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে কিছু পরীক্ষা করতে। এরপর এক মাস ধরে পারমাণবিক জ্বালানি প্রবেশ করানো হবে। ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে। তবে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের সময় এখন নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় আছে।
মহিউদ্দিন
ঢাকা