আ.লীগ নির্বাচনে থাকবে কি না সে সিদ্ধান্ত তাদের, বিবিসিকে ড. ইউনূস

0
12
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থাকবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত দলটিকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নির্বাচন করতে চায় কি না, আমি তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করবে তা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি প্রধান উপদেষ্টার একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে, যেখানে এসব কথা বলেছেন তিনি।

চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত বছর ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর নতুন সরকারের দায়িত্ব নিতে বলা হলে চমকে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বিবিসিকে বলেছেন, আমার কোনো ধারণা ছিল না যে— আমি সরকারের নেতৃত্ব দেব। আমি এর আগে কখনও সরকারি কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করিনি এবং এরপরও পরিস্থিতি বুঝে ঠিকভাবে কাজ করতে হয়েছিল।

ড. ইউনূস বলেন, একবার এটি স্থির হয়ে গেলে আমরা অন্যান্য কিছু জিনিস সংগঠিত করতে শুরু করি। যার মধ্যে— আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা এবং অর্থনীতি ঠিক করা দেশের জন্য অগ্রাধিকার ছিল।

প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। এর মাত্র তিনদিনের মাথায় ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। নাটকীয় এ পটপরিবর্তনের পর অভ্যুত্থান দমনে গণহত্যার অভিযোগে বিগত সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ শীর্ষস্থানীয় নেতা ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সেইসঙ্গে একটি পক্ষ দাবি তুলেছে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করার।

তাছাড়া, ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার সময় থেকেই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল রাষ্ট্রের বড় ধরনের সংস্কার ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচন। কিন্তু ব্যাপকভাবে সংস্কারের জন্য প্রয়োজন সময়।

এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন কবে হবে, ঘুরেফিরেই আসছে সেই প্রশ্ন। সেইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে কি না।

এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান আরও একবার সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নিজের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হবে। সরকার কত দ্রুত সংস্কার করতে পারে তার ওপর নির্বাচনের এই সময়সীমা নির্ভর করছে। কারণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এসব সংস্কার দরকার।

তিনি বলেন, যদি আমাদের ইচ্ছামতো দ্রুত সংস্কার করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরে আমরা নির্বাচন করতে পারবো। আর যদি সংস্কারের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

আর আওয়ামী লীগকে নিয়ে আগামী নির্বাচন হবে কি না, তার জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত তাদেরকেই নিতে হবে। আমি তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এছাড়া নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করবে তা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাস পেরিয়ে গেলেও ঢাকার মানুষ বলছেন, আইনশৃঙ্খলা এখনও পুনরুদ্ধার হয়নি এবং পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে না। এমন মন্তব্যে ড. ইউনূস বিবিসিকে বলেন, এখন যা ঘটছে, তা অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা বা ভিন্ন কিছু নয়। যদি আপনি গত বছরের একই সময়ের সাথে তুলনা করেন তবে, আইনশৃঙ্খলা ঠিক আছে।

একইসঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান দুর্দশার জন্য আগের সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনাগুলো হওয়া উচিত— তা আমি সমর্থন করছি না। আমি বলছি যে, আপনাকে বিবেচনা করতে হবে, আমরা কোনো আদর্শ দেশ বা আদর্শ শহর নই, যা আমরা হঠাৎ করে তৈরি করেছি। এই অবস্থা হচ্ছে একটা ধারাবাহিকতা যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি এমন একটি দেশ যেখানে এসব বহু, বহু বছর ধরে চলছে।

বর্তমানে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শেখ হাসিনা ইউটিউবে ভাষণ দেবেন এমন খবরে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের সদস্যদের বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়া হয়েছিল।

এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ তাদের জন্য নিরাপদ নয় বলে আওয়ামী লীগের সদস্যদের দাবি সম্পর্কে বিবিসি জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, দেশে আদালত আছে, আইন আছে, থানা আছে, তারা গিয়ে অভিযোগ করতে পারে, তাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারে। আপনারা অভিযোগ করতে কেবল বিবিসি সংবাদদাতার কাছে না গিয়ে অভিযোগ করতে থানায় যান এবং দেখুন আইন তার গতিতে কাজ করছে কি না।

ট্রাম্প প্রশাসনের বিদেশি সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত এবং কার্যকরভাবে মার্কিন এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নকৃত প্রায় সব কর্মসূচি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের মতো দেশে প্রভাব ফেলবে। এমন মন্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। এটি ভালোই হয়েছে। কারণ, তারা এমন কিছু করছে যা আমরাই করতে চেয়েছিলাম, যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং এর মতো আরও জিনিস, যা আমরা কখনোই ঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারিনি।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সরকারি উন্নয়ন সহায়তার তৃতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কীভাবে এই ঘাটতি পূরণ করা হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যখন এটা হবে, আমরা তা পূরণ করব।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.