কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজারো মানুষের ফুলেল শ্রদ্ধা

0
9
ফুলে ফুলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন। আজ শুক্রবার সকালে
ওমর সানি ও মুন্নী আক্তার দম্পতির বাসা ঢাকার মিরপুর-১ নম্বর সেকশনে। পাঁচ বছর ধরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই দম্পতির শ্রদ্ধা নিবেদনের সঙ্গী ছিল তাঁদের সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে তাসমিম। ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রতিবছর এই দম্পতি একমাত্র মেয়ে তাসমিমকে নিয়েই শহীদ মিনারে আসতেন। এবার তাদের দল আরেকটু ভারী হয়েছে। এ দলে যুক্ত হয়েছে আরেক নতুন সদস্য, যার নাম মুনজেরিন, বয়স মাত্র ১০ মাস। সে ওমর-মুন্নী দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান।
 
আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে চার সদস্যের এই পরিবারের সঙ্গে দেখা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁরা ঘোরাফেরা করে ছবি ও সেলফি তুলছিলেন। পেশায় ব্যবসায়ী ওমর সানি বললেন, ‘ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যেই এখানে এসেছি। প্রতিবছরই এই শহীদ মিনারে এসেই শ্রদ্ধা নিবেদন করি। সন্তানদেরও সঙ্গে আনি, যাতে তারা বাংলা ভাষার জন্য ভাষাশহীদদের যে আত্মত্যাগ, সেটা হৃদয়ে ধারণ করে বাংলাকে ভালোবাসতে পারে।’
 
আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসটিতে হাজারো মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে গেছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আজ ভোর থেকেই প্রভাতফেরি করে শ্রদ্ধার ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
 
এর আগে একুশের প্রথম প্রহরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি পৃথকভাবে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। রাত ১২টার পর প্রথমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর রাত ১২টা ১২ মিনিটের দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
 
আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ দলে দলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংঘ, সংগঠন, আর্থিক, সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হল, ক্লাব, ইউনিয়নের হয়ে কিংবা ব্যক্তি ও পারিবারিকভাবে শহীদবেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। তাঁদের কারও হাতে একগুচ্ছ ফুল, ফুলের তোড়া কিংবা শ্রদ্ধাঞ্জলি। তাঁদের পোশাক ও সজ্জায় শোকের কালো রং। কণ্ঠে সেই বেদনাবিধুর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…’।
 
সাড়ে সাতটার দিকে শহীদবেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। পরে ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক তামজিদ হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০২৪ সালে একটি বৈষম্যহীন সমাজের জন্য, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা তাঁদের জীবন দিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। বৈষম্যহীন যে সমাজ আমরা গড়তে চাই, সেখানে আমরা এমন বাংলাদেশ চাই, যে বাংলাদেশে সকল জাতিসত্তার মানুষ তার নিজ নিজ ভাষায় নিশ্চিন্তে কথা বলতে পারবেন, মাতৃভাষায় শিক্ষা নিতে পারবেন।’
 
বিভিন্ন দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের বাইরেও ব্যক্তি উদ্যোগে শত শত মানুষকে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে। ১১ বছর বয়সী মেয়ে রাইদাকে সঙ্গে নিয়ে মতিঝিল থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন সরকারি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন। মেয়ের পাঁচ বছর বয়স থেকেই মেয়েকে সঙ্গে করে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসছেন বলে জানালেন তিনি।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ শুক্রবার সকালে হাজারো মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ শুক্রবার সকালে হাজারো মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেছবি: দীপু মালাকার
 
রাসেল সাবরিন বলেন, ‘বাংলা ভাষা একটি সমৃদ্ধ ভাষা। এ ভাষার শব্দভান্ডার, এ ভাষায় অভিব্যক্তি প্রকাশ, এ ভাষার মাধুর্য, পৃথিবীর কোনো ভাষার এর সঙ্গে তুলনা হয় না। বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি, যাতে বাংলা ভাষা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। বাংলা ভাষার যে ঐতিহ্য আছে, এটার গুরুত্ব তারা যাতে উপলব্ধি করতে পারে।’
 
সকাল পৌনে আটটার দিকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। পরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। গণতন্ত্রচর্চার পথে আমরা হাঁটতে পারছি কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র একটি চলমান প্রক্রিয়া। যত দিন যাবে আমরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করব। বিভিন্ন সময় গণতন্ত্রের সংগ্রাম করতে গিয়ে আমরা হোঁচট খেয়েছি। কিন্তু বাঙালি থেমে থাকেনি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.