একটি পরিবারের সঙ্গে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছেন এই অভিনেত্রী। প্রয়োজনে সাবলেটেও থাকতে চান। সেখানে ভাড়া থেকে শুরু করে সবকিছুই ভাগাভাগি করবেন, এমনকি সেই পরিবারের মানুষের পাশে দাঁড়াতেও আপত্তি নেই। মনের এই ইচ্ছা পোষণ করে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন অভিনেত্রী রিমু রোজা খন্দকার। তিনি একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী প্রিন্সেস ডায়ানাখ্যাত টিনা চৌধুরীর মেয়ে। কেন সাবলেটে থাকতে চান সেটাই জানালেন রিমু।
রিমু জানান, তিনি ১৩ বছর ধরে একটি বাসায় একাই থাকেন। সেই বাসা ছাড়তে যাচ্ছেন। কিন্তু এবার আর একা নয়, থাকতে চান কোনো একটি পরিবারের সঙ্গে বা কোনো একটি পরিবারের সদস্য হয়ে। রিমু বলেন, ‘আমার ৪২ বছরের জীবনে আমি কখনোই কোনো পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারিনি। আমাকে শৈশব থেকেই একা বড় হয়ে নিজের দায়িত্ব নিতে হয়েছে। আমার এখন চাওয়া কোনো একটি পরিবারের সঙ্গে থাকা।’
![অভিনেত্রী রিমু রোজা খন্দকার। ছবি: ফেসবুক থেকে](https://media.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2025-02-12%2Fbz4p2x4u%2F468813872_8983319858420286_8515994919095912355_n.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress&fmt=avif)
সম্প্রতি তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। এ সময়ে অসুস্থ হয়ে থাকলেও কিছু সহকর্মী ছাড়া তেমন কেউ দেখার ছিল না। তখন তিনি আরও উপলব্ধি করেন, একটি পরিবারের সঙ্গে থাকলে হয়তো তিনি আর একা হবেন না। সামান্য বিপদে কারও সহযোগিতা পাবেন। বিপদে একটু সহায়তার হাত পাবেন। মনের কথা বলতে পারবেন।
রিমু বলেন, ‘দিন যত যাচ্ছে ততই আমি “পরিবার” শব্দের অর্থ গভীরভাবে বুঝতে পারছি। মানুষ আসলে একা থাকতে পারে না। নানা প্রয়োজনে একে অন্যকে মানুষের পাশে দরকার হয়। দিন শেষে একটু হাসার, একটু কথা বলার জন্য হলেও একটা মানুষ প্রয়োজন।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি এখনো তেমন কিছু রান্না করি না। বাজার করা হয় না। একা মানুষ, দেখা যায় অনলাইনেই অর্ডার দিয়ে কিছু কিনে খাই। কিন্তু একটি পরিবার থাকলে আমার জীবন হয়তো কিছুটা হলেও বদলাত। আমি অ্যাটলিস্ট কারও জন্য বাজার করতে পারতাম। দুঃখ–কষ্ট ভাগাভাগি করতে পারতাম, একটু মমতা পেতাম। কারও জন্য কিছু কিনতে পারতাম। এই কষ্টটা যার পরিবার নেই সে ছাড়া কেউ বুঝতে পারবে না।’
![তাঁর পছন্দের অভিনেতাদের মধ্যে একজন নিলয় আলমগীর](https://media.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2025-02-12%2Ff0ytjlek%2F47629978293616690439186976787921504718194801n.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress&fmt=avif)
শৈশব থেকেই পরিবারের সঙ্গে না থাকার কষ্টটা বুকে নিয়ে ঘুরছেন। অভিনেত্রী মাকে হারিয়েছেন শৈশবেই। পরে ভারতেশ্বরী হোমসে বড় হয়েছেন। সেখানে সহপাঠীদের সবাই ছুটিতে মা-বাবার সঙ্গে বাড়ি ফিরলেও তাঁকে ফিরতে হতো মামার সঙ্গে। তবে অনেক সময় তাঁকে নেওয়ার মতো তেমন কেউ আসতেন না। হোস্টেলেই থেকে যেতে হতো। সেই দিনগুলো এখনো তাঁকে পরিবারের কথা মনে করিয়ে দেয়। কলেজে পড়াশোনার পরে অভিনয়ে নিয়মিত হন। তখন কিছুদিন বাবাকে কাছে পেয়েছিলেন। সেই বাবাও একসময় দূরে সরে যান।
রিমু বলেন, ‘পরিবারের চিন্তা করে একসময় বিয়েও করেছিলাম। সেটা ছিল জীবনের বড় ভুল। পরিবার না থাকায় মানুষ চিনতে ভুল করি, আমি কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছি সেটা বলার মতো কাউকে পাইনি। বিচ্ছেদের পরে আর সংসারমুখী হইনি। এখন কোনো মেয়ে যে বোনের মতো বা কোনো একটি পরিবার ভাই–বোনের মতো হয়ে থাকতে পারবে, যাদের কাছে আমার কোনো প্রত্যাশা নাই।’
![প্রিন্সেস টিনা খানের সঙ্গে রিমু। ছবি: ফেসবুক থেকে](https://media.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2025-02-12%2Frj6iuk17%2F5_1714742544.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress&fmt=avif)
তবে একসঙ্গে বাসা ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে এখন কিছুটা ভয়ের মধ্যেও আছেন। তিনি মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে কারও ওপর বিশ্বাস রাখাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া শহরে একটি মেয়ের জন্য বাসা খুঁজে পাওয়াটাও কষ্টের। তিনি বলেন, ‘আমাদের সহকর্মী ও পরিচিতজনদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের বলেছি, বিশ্বাস করা যায় এমন কাউকে খুঁজে দিতে।’
রিমু গাজীপুরের পুবাইলে ‘প্রবাসী বড় ভাই’ নামে একটি নাটকের শুটিং করছেন। নাটকের পরিচালক ফজলুল হক। নাটকের সহশিল্পী টুটুল চৌধুরী, আঁখী চৌধুরীসহ অনেকে। সবশেষে রিমু বললেন, ‘একসময় মহিলা হোস্টেলে থাকার কথা মাথায় এলেও সেখানে কিছু নিয়মনীতির কারণে সেটা সম্ভব নয়। কারণ, আমি শুটিং করি। অনেক সময় শুটিং শেষ করতে দেরি হয়ে যায়। কখনো অনেক ভোরে শুটিংয়ে যেতে হয়।’